মারিউপল থেকে জোর করে হাজার হাজার বেসামরিক ইউক্রেনিয়ান নাগরিকদের সীমান্ত পার করে রাশিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। খবর- বিবিসির
স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে মারিউপলের পূর্বে রাশিয়ার সীমান্তের ভেতরে একটি অস্থায়ী শিবির। যেখানে পাঁচ হাজারের মতো ইউক্রেনিয়ানকে রাখা হয়েছে।
ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরানা ভেরেশুক বলেছেন, ৪০ হাজারের মতো ইউক্রেনিয়ানকে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকায় জোর করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাশিয়াতে রয়েছেন মারিউপলের এরকম একজন শরণার্থী জানিয়েছেন, আমাদের সবাইকে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার কর্মকাণ্ডকে বর্ণনা করতে গিয়ে “সংশোধনী শিবির” শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। যা চেচনিয়া যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই যুদ্ধে হাজার হাজার চেচেন নাগরিকদের অস্থায়ী শিবিরে আটকে রেখে নৃশংস কায়দায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যাদের অনেকেই আর ফিরে আসেননি। যুদ্ধকালীন সময়ে বেসামরিক নাগরিক এভাবে জোর করে নিয়ে স্থানান্তর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে বিবেচনা করা হয়।
মারিউপলের কর্তৃপক্ষ বলছে, এক লাখ চল্লিশ হাজারের মত বাসিন্দা অবরুদ্ধ শহরটি থেকে পালাতে সক্ষম হলেও আরও এক লাখ সত্তর হাজারের মতো মানুষ সেখানে আটকে পড়েছেন। তিন সপ্তাহ ধরে সেখানে রাশিয়ান বোমা হামলা শহরটিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। আতঙ্কগ্রস্ত অধিবাসীরা মাটির নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ব্যপক খাবার, পানি ও ঔষধের সংকটের মুখে পড়েছেন তারা।
নাগরিকদের নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য যে ‘হিউম্যানিট্যারিয়ান করিডোর’ চালু করতে দুপক্ষই সম্মত হয়েছে সেটি ব্যাবহার করে গুটিকতক মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পেরেছেন। বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ হওয়ার কথা এরকম ‘মানবিক করিডোর’ লক্ষ্য করে রাশিয়ার বোমা হামলা অব্যাহত রয়েছে বলে ইউক্রেন অভিযোগ করেছে।
এরকম খবরও আসছে যে, মারিউপলের ক্ষুধার্ত, অসুস্থ বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল, এমনকি রাশিয়ার সীমান্তের ভেতরে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেড ক্রসের একজন মুখপাত্র ম্যাট মরিস বলছেন, যদি রাশিয়া এবং ইউক্রেন নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে শুধুমাত্র সেক্ষেত্রেই তারা বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং জরুরি সহায়তা সরবরাহ করতে পারবে। সেটি এখনো নিশ্চিত হয়নি এবং আইসিআরসি দুই পক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, নিরাপদ পথ তৈরি করার ব্যাপারে দুই পক্ষকেই একটি সমঝোতায় আসতে হবে এবং নিশ্চয়তা দিতে হবে। নাগরিকদের নিরাপদে সরে যেতে একটি রুট তৈরি করতে হবে, সেটি সম্পর্কে তথ্য প্রচার করতে হবে এবং নাগরিকদের সরে যেতে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন বলে যে, মানুষজনকে কোন স্থান ত্যাগ করতে দিতে হবে কিন্তু আবার তাদের জোর করেও কোথাও স্থানান্তর করা যাবে না। যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে দিতে হবে। কেউ যদি কোথাও থাকতে চায় তাহলে সেখানে থাকতে দিতে হবে। খুবই মরিয়া শোচনীয় অবস্থা মারিউপলে। সেখানে যাওয়া আসার নিরাপদ পথ তৈরি করার জন্য আমরা দুই পক্ষকেই আহবান জানিয়েছি। এই আমাদের কোন দল সেই সুযোগ পাচ্ছে না।
মারিউপলের একজন শরণার্থী এবং রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবী জানিয়েছেন, অন্য আরো অনেকের সাথে তিনি একটি বাঙ্কারে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু রাশিয়ার সেনারা তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সরে যেতে বলেছে। বোমা হামলার পর ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর তারা চার কিলোমিটার হেঁটে একটি রাশিয়ান চেক পয়েন্টে পৌঁছান। সেখান থেকে তাদের রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন দোনেৎস্ক নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, সেখানে পৌঁছানোর পর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি সেখানে থাকবেন নাকি রাশিয়ার ভেতরে যাবেন। কিছু বয়স্ক লোকদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে তারা জানেনও না যে কোথায় তারা যাচ্ছেন এবং কেন। তাদের ধারণা তারা রাশিয়ার রস্তভে কয়েক মাস থাকতে পারবেন এবং তারপর হয়ত আবার মারিউপলে ফিরে আসবেন। কিন্তু তাদের রস্তভের উত্তরে সামারা নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে দুই সপ্তাহের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেনের শত শত বছরের পুরনো ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তাদের দুই পাশেই আত্মীয় স্বজন রয়েছে। কিন্তু মারিউপলের এই মানুষগুলো স্বেচ্ছায় ওদিকে গেছেন কিনা সেটি পরিষ্কার নয়।
রাশিয়ার খবরের কাগজ রসিস্কায়া গ্যাজেটা ২১ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে লেখা হয়েছে যে শরণার্থী বহনকারী দীর্ঘ গাড়িবহর মারিউপলের পূর্বের একটি গ্রাম বেজিমেন পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় নিয়েছে।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.