হিজাব নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখলো কর্নাটকের হাইকোর্ট

হিজাব পরা বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলন নয়, এ রায় দিল কর্নাটক হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শ্রেণীকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ করে রাজ্য সরকারের দেওয়া আদেশ বহাল রেখেছে আদালত। এতে খারিজ হয়ে গেছে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া পিটিশন। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে আজ রায় ঘোষণার আগে কর্নাটক সরকার বিক্ষোভ ঠেকাতে বড় জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং কয়েকটি এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। যদিও কর্নাটক হাইকোর্টের এই আদেশ ভারত জুড়ে প্রচলিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এই মামলায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্নাটক সরকার বলে এসেছে, হিজাব পরা ইসলামের বাধ্যতামূলক অনুশীলনের মধ্যে পড়ে না। আজ হাইকোর্টের রায়েও উঠে এল তা। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

গত ১ জানুয়ারি কর্নাটকের উদুপিতে একটি প্রি-ইউনিভার্সিটিতে কয়েকজন হিজাব পরিহিত শিক্ষার্থীকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কলেজটির উন্নয়ন সমিতির সভাপতি বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হিজাব পরিহিতরা ক্লাসে ঢুকতে পারবেন না। সেই বিতর্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে রাজ্য জুড়ে। হিজাবের পাল্টা হিসেবে গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি হয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। শান্তির আহ্বান জানান কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত স্কুল, কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এরপর ২৬ জানুয়ারি কর্নাটক সরকার এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। ঘোষণা করা হয়, কমিটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করার আগ পর্যন্ত ছাত্রীরা কেবলমাত্র ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবেন। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয়— কিছুই পরার অনুমতি নেই। সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েকজন ছাত্রী কর্নাটক হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। তাঁরা আদালতকে জানান, হিজাব পরা তাঁদের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনওভাবেই তা বাতিল করা যায় না।

এ ছাড়া কয়েক মুসলিম শিক্ষার্থী আদালতে পিটিশন আবেদন করে যুক্তি দেয় ভারতের সংবিধান তাদের হিজাব পরার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তবে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত বলেছে, শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার রাজ্য সরকারের রয়েছে।

এদিকে রিট আবেদনটি প্রথমে শোনা বিচারক গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি একটি বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। ওই সময়ে তিনি কারণ জানান, এই প্রশ্নের বিশালতা বিতর্কিত বিষয়। ওই বৃহত্তর বেঞ্চ অন্তর্বর্তী এক আদেশে জানায়, চূড়ান্ত রায়ের আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় পোশাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে না। এই অন্তর্বর্তী আদেশের কারণে অনেক মুসলিম শিক্ষার্থী ক্লাসে যাওয়া বাদ দেয়। অনেকে পরীক্ষাতেও অংশ নেয়নি। সূত্র: বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকার

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.