মার্চের মধ্যে স্থিতিশীলতা তহবিলে টাকা না দিলে জরিমানা: বিএসইসি চেয়ারম্যান

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যে সব কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা করেনি, তাদেরকে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে তা জমা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তা জমা না করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বড় আকারের জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে রাজধানীর দিলকুশা হোটেল পূর্বাণীর হল রুমে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড ( সিএমএসএফ) এর উদ্যেগে বিনিয়োগকারীদের অদাবিকৃত লভ্যাংশ বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডর সাবেক চেয়ারম্যান ও সিএমএসএফ’র চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং বাংলাদেশ আ্যসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী। এ ছাড়াও সিএমএসএফ’র পরিচালনা পরিষদ, বিভিন্ন কমিটির চেয়ারম্যান ও সদস্য এবং সিএমএসএফ’র প্রথম চিফ অব অপারেশন মনোয়ার হোসেন এফসিএ, এফসিএমএ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন কিছু বিনিয়োগকারী বিভিন্ন কারণে তাদের টাকা পেতে সমস্যায় পড়েছেন। কিন্তু সিএমএসএফের বর্তমানের কাজের ধারাবাহিকতায় যারা তাদের টাকা পেয়েছেন তারা তাদের কাছের লোকদের এই খবর দিবেন। এতে করে মানুষ জানবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে এবং কাজ করছে। অনেকে মনে করেন, পুঁজিবাজারে ভয় রয়েছে। আমরা বলবো সুন্দর পুঁজিবাজারের জন্য সরকার কাজ করছে এবং কমিশন কাজ করছে। আমরা আপনাদের জন্য কাজ করছি আপনারা ভালো কোম্পানি দেখে বিনিয়োগ করুন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসার পর থেকে জমা হওয়া অবণ্টিত লভ্যাংশ কোথায় রাখা হয়েছে বা কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে, নাকি কেউ নিয়ে গেছে, তা খুঁজে বের করা হবে বলে। এই অর্থ খুঁজে বের করতে আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষক দিয়ে নিরীক্ষা করা হবে। এর মাধ্যমে ওই টাকা কোথায় গেছে, তা খুঁজে বের করব। যে টাকা নিজের না, তা আপনারা (কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট) নিলেন কেনো? অন্যের টাকা নিয়ে নিজের বিল্ডিং-বাড়ি বানানোর অধিকার কেউ দেয়নি।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের দাবি মেটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিনিয়োগকারীরা হয়তো অনেক বছর জানতোই না, তাদের পাওনা টাকার বিষয়ে। আজকে পাওয়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব আসবে। এই বাজারে বিনিয়োগ করলে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে বাহিরে ম্যাসেজ চলে যাবে। এছাড়া তাদের পাওনা আদায় করে দেওয়ার জন্য যে রেগুলেটর আছে, সেটা তাদের মধ্যে আস্থার তৈরি করবে।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ জমে থাকার বিষয়টি যখন আমরা তুলে নিয়ে আসলাম, তখন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ওই লভ্যাংশের পাওনাদার বিনিয়োগকারীদের খুঁজে পাচ্ছে। ঠিক আছে পাক। আমাদের উদ্যোগের ফলে যদি বিনিয়োগকারীরা তাদের পাওনা ফেরত পায়, সেটাও ভালো। তবে এখনো কিছু কোম্পানি থেকে অবন্টিত লভ্যাংশের হিসাব নেই বলে কমিশনে চিঠি পাঠায় বলে জানান তিনি। অনেকেই মাসের পর মাস সময় চেয়েই যাচ্ছেন। তবে ৩১ মার্চের পরে কমিশন কঠোর হবে। এখনো জরিমানা করা শুরু করিনি, তবে শীগগির কমিশন পদক্ষেপ নেবে। আমরা অনেক সময় দিয়েছে এবং অপেক্ষা করেছি। চলতি মাসের পরে আর সময় দেওয়া হবে না।

অবণ্টিত লভ্যাংশের অপব্যবহারকীরদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, চলতি মাসের মধ্যে যদি ওই লভ্যাংশের হিসাব দিতে না পারে এবং ফান্ড কোথায় রয়েছে বলতে না পারলে ও স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে স্থানান্তর না করলে, কমিশন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। যা অবন্টিত লভ্যাংশের থেকে কয়েকগুণ বেশি জরিমানা হবে।

গত সপ্তাহে বাজারে নেতিবাচকতার কারন হিসাবে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, যুদ্ধ বা যেকোন কারন হোক, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এমন পরিস্থিতি হয়েছে। তবে আমরা স্ট্র্যাটেজিক ও ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছি। এক্ষেত্রে স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা যে উদ্দেশ্যে এই ফান্ড গঠন করেছিলাম, সেটা সত্যিই কাজে লেগেছে। তাই শেয়ারবাজারে ভয়ের কিছু নাই বলে বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেন তিনি। এই বাজারে বিনিয়োগকারীদের পাশে সরকার থেকে শুরু করে সবাই আছে বলে জানান তিনি।

পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানির বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পলিসি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রায় ২০টি কোম্পানি এখন বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। ওইসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের অর্থ বুঝিয়ে দেবে। যেসব কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীদের অর্থ ২০-৩০ বছর ধরে আটকে আছে। তবে বর্তমানে বের হয়ে যাওয়া ও বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত দীর্ঘমেয়াদি বলে জানান তিনি। এটি সহজ করার জন্য সিএমএসএফের হাতে দেওয়া হবে। এখান থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ ফেরত পাবে। এভাবে শেয়ারবাজার থেকে বেরিয়ে যেতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর ফান্ড সিএমএসএফে নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা করছি। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে বন্ড মার্কেট ছাড়া কোন দেশ উন্নতি হয় না বলে জানিয়েছি। আমরা এই মার্কেটটাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছি। তবে বিনিয়োগ সীমার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করার কারনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এ বিষয়টি সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংককে সহযোগিতার জন্য বলেছি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, আমাদের বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন জটিলতায় তাদের প্রাপ্য পাচ্ছেন না। বর্তমানে সিএমএসএফের উদোগ একটি মাইলফলক হবে বলে মনে করছি। সিএমএসএফ যে দায়িত্ব নিয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করবে এবং এখন পর্যন্ত যে সব মানুষ আনক্লেম সমস্যার মধ্যে রয়েছে তাদের সমস্যা সমাধান করবে। তাহলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সুন্দর একটা সিস্টেমে চলে আসতে পারবো।

সমাপনী বক্তব্যে সিএমএসএফ’র চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বাজারের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সিএমএসএফ’র বিভিন্ন কার্যক্রম তুল ধরেন।

উল্লেখ্য, সিএমএসএফ’র প্রধান দায়িত্বগুলোর মধ্যে একটি বিনিয়োগকারীদের দাবি নিস্পত্তি করা, এর অংশ হিসেবে সিএমএসএফ দাবি নিম্পত্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে এবং ইতিমধ্যেই ১৮টি দাবি নিষ্পত্তি করেছে। যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে।

অর্থসূচক/এমআর/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.