আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগাহের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে তালেবান যোদ্ধারা। তালেবানের কাছে আফগানিস্তানের প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানীর পতন হতে পারে এটি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তালেবানরা লস্করগাহের দখল নিতে পারলে প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বড় কোনো শহরের পতন হবে। আর তা হবে আফগান সরকারের জন্য ‘বড় একটি আঘাত’।
২০ বছরের আগ্রাসন গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো।
গত মে মাসে এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানে সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অভিযান জোরদার করেছে তালেবান।
আফগানিস্তানের হেলমান্দ ছাড়াও হেরাত ও কান্দাহার দখলে তীব্র লড়াই করছে তালেবানরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত সোমবার তালেবানদের লক্ষ্যবস্তু টার্গেট করে বিমান হামলা করেছে আফগান ও মার্কিন সেনাদের যৌথ বাহিনী। তবে তালেবানরাও ছেড়ে কথা বলছে না। তারাও পাল্টা হামলা করে পর্যুদস্ত করে তুলছে আফগান সেনাদের।
আফগান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল সামি সাদাত বলেন, এখানে যদি তালেবানরা জিতে যায়, তবে তা বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য চরম পরিণতি বয়ে আনবে।
আফগানিস্তানের তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তালেবানদের ক্রমাগত হামলা ও হুমকির কারণে ১১টি রেডিও ও চারটি টিভি স্টেশন হেলমান্দ প্রদেশে তাদের সম্প্রচার ব্ন্ধ রেখেছে।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কান্দাহার বিমানবন্দরে তালেবানদের রকেট হামলার পর যৌথ বাহিনী ব্যাপক অভিযানে নেমেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, তালেবানরা কান্দাহারে একটি টিভি স্টেশন দখল করেছেন। প্রচণ্ড যুদ্ধে দিশেহারা মানুষ গ্রামের দিকে ছুটছেন, বড় বড় ভবনের আড়ালে প্রাণ বাঁচাতে চেষ্টা করছেন তারা।
আফগানিস্তানের পশ্চিমে হেরাত প্রদেশে জাতিসংঘের একটি স্থাপনায় শুক্রবার হামলা চালিয়েছে তালেবানরা। তবে আফগান ও মার্কিন সেনাদের যৌথ অভিযানে বেশকিছু এলাকা মুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি আফগানিস্তানে দুই দশক সামরিক অভিযানের পর সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে দেশটিতে দ্রুত তালেবানের উত্থান ঘটছে। তালেবান যোদ্ধাদের ঠেকাতে মোতায়েন করা হচ্ছে হাজার হাজার আফগান সেনা।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক অভিযানের অন্যতম কেন্দ্র ছিল হেলমান্দ প্রদেশ। এটি তালেবানের দখলে গেলে তা হবে আফগান সরকারের জন্য বড় বিপর্যয়। লস্করগাহের পতন ঘটলে ২০১৬ সালের পর এটি হবে তালেবানদের প্রথম কোনো প্রাদেশিক রাজধানী দখল। বর্তমানে তিনটি প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিতে লড়াই চালাচ্ছে তালেবান।
তালেবানের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারি বাহিনী। এর জন্য হঠাৎ করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারকে দায়ী করেছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। পার্লামেন্টে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির কারণ হলো সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আচমকা নেওয়া হয়েছে। আফগান প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বিষয়ে তিনি ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সেনা প্রত্যাহারের পরিণতি ভালো হবে না।
এ দিকে আফগানিস্তানের শরণার্থীদের অভিবাসনে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত রয়েছে, এমন দুটি সূত্র এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আফগানিস্তানে চলমান লড়াই-সংঘাতে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন অনেক আফগান নাগরিক। তাদের সাহায্য করতে বাইডেনের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পাকিস্তান সীমান্তের কাছাকাছি দখল করা একটি শহরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের জন্য তালেবানকে অভিযুক্ত করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেন, তালেবানদের এই অত্যাচার কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা যা করছে, তা স্রেফ প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড।
আফগানিস্তানের এমন সহিংস পরিস্থিতিতে বাইডেন প্রশাসন বলেছে, মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা হাজারো আফগান শরণার্থীকে তারা যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেবে।
অর্থসূচক/কেএসআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.