পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সোমবার (১৭ মে) কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়ে ব্যাপক হয়রানি ও শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলাম। সচিবালয়ে তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে শাহবাগ থানায় নিয়ে এসেও কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
এদিকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শাহবাগ থানার সামনে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ গণমাধ্যমকর্মী।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো রিপোর্ট করেছেন রোজিনা ইসলাম। তাতে মন্ত্রণালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠিটি তার উপর প্রচণ্ডভাবে ক্ষিপ্ত ছিল বলে মনে করছেন তার সহকর্মীরা। সোমবার কোনো এক কৌশলে তাকে অপরাধী সাজিয়ে ব্যাপকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলে তাদের দাবি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা গেছে, রোজিনাকে ফ্লোরে ফেলে চেপে ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা রোজিনার গলা টিপে ধরেছেন।
সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখানেও কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয় কোনো মামলা গ্রহণ বা দায়ের না করেই।
পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে রোজিনার বিরুদ্ধে ফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়। সোমবার রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী। তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৮৯ ও ৪১১ ধারায় এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
রোজিনা ইসলামকে হেনস্তার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবিতে থানার সামনে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা। তাঁরা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবের পদত্যাগও দাবি করেন।
এদিকে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে লাঞ্ছিত করা ও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, রোজিনা ইসলামের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনায় সাংবাদিকেরা উদ্বিগ্ন, ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতি ধারাবাহিক আক্রোশেরই প্রতিফলন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো নিরপরাধ সাংবাদিক যেন হয়রানির শিকার না হয়—সেটা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেন, প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সদস্য রোজিনা ইসলামকে হয়রানির তীব্র নিন্দা জানাই এবং একইসাথে আমরা তার আশু মুক্তি দাবি করছি। এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের শাস্তি ও ন্যায়বিচার দাবি করি।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.