‘লিকুইডিটি সমস্যা থেকে রক্ষায় ব্যাংকগুলোর দিকে নজর দিতে হবে’

করোনার চাপের পরে দেশের অর্থনীতিতে আঘাত করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সারাবিশ্ব এখন অনিশ্চিত সময় পার করছে। দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট নেতিবাচক। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বড় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে কোনো ব্যাংক যেনো লিকুইডিটি সমস্যায় না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।

শনিবার (১৮ মার্চ) ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) আয়োজিত ‘পোস্ট কোভিড প্রভাব এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ: অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ’ বিষয়ক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম। এছাড়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইসিএসবি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ এবং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির চেয়ারম্যান।

আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান এই কঠিন সময়ে যারা দারিদ্র্যের স্বীকার হয়েছেন তাদের সামাজিকভাবে সহযোগিতা করা দরকার। তবে এক্ষেত্রে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা ঢেলে দেওয়া উচিত না। খেয়াল রাখতে হবে কোনো ব্যাংক যেনো লিকুইডিটি সমস্যায় না পড়ে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, যা বর্তমান প্রায় ২ হাজার ৮০০ ডলার। তবে মূল্যস্ফীতি ব্যাপকহারে বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। সবকিছুই হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার ইতিহাস খুব বেশি ভালো না। আমরা চাইলেই বিদেশি সংস্থাগুলো থেকে ঋণ নিতে পারি না। সংস্থাগুলো প্রতিশ্রুতি দিলেও ঋণ পেতে কিছুটা সময় লাগে। একইসঙ্গে বর্তমানে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে। এজন্য সরকারকে ব্যাংক খাত থেকে অনেক বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যাপক সহযোগীতা করছে। দেশ কৃষিক্ষেত্রে অনেক এগিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরেও দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই।

এ সময় আসিফ ইব্রাহিম বলেন, করোনা শুরু আগে আমাদের অর্থনীতির গ্রোথ অনেক ভালো ছিলো। এরপরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে থাকে দেশের অর্থনীতিতে। করোনা জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছিলো। তবে মহামারির সময় আমরা ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধা কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অধিনে নিয়ে আসা গেছে। এর ফলে অনেক বেশি প্রভাব পড়েনি। তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এখনই দেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। যুদ্ধের শুরুতে তেলের দাম বেড়েছিলো। তবে কয়েকদিন ধরে তেলের দাম আবার কমে আসছে। এটি অনেকটা স্বস্তির। রাশিয়া থেকে সার সহ আরও অনেক পণ্য আমরা আমদানি করি। সামনের দিনগুলোতে এসব আমদানি পণ্যে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।

সেমিনারে আসাদ উল্লাহ বলেন, করোনার সময় দুই বছর সারাবিশ্ব লকডাউনের মধ্যে ছিলো। এ সময় বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। এরপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পড়তে শুরু করেছে। এই ধরনের সিপিডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইনস্টিটিউটের সদস্যগণ সাম্প্রতিক পরিবর্তন এবং হালনাগাদ জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। তিনি আইসিবি ও বিডার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার জন্য গুরুত্ব আরোপ করেন। এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আইসিএসবি বিডাকে পেশাদার সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও পেশাদার দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করতে পারবো।

 

 

অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.