ইউক্রেনে ‘লেওপার্ড ২’ সরবরাহের জন্য চাপ বাড়ছে

রাশিয়ার হামলার মোকাবিলা করতে ইউক্রেনকে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করে চলেছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ কিন্তু কিয়েভের সব অনুরোধ সঙ্গে সঙ্গে মানছে না অনেক দেশ৷ আমেরিকা, জার্মানি ও ফ্রান্সের মতো নেতৃস্থানীয় পশ্চিমা শক্তি এমন সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সময় নিয়ে ঝুঁকি ও সম্ভাব্য পরিণাম বিবেচনা করে তবেই সামরিক সহায়তার মাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে৷ বর্তমানে ব্যাটেল ট্যাংক সরবরাহের ক্ষেত্রে সেই দ্বিধা ও বিলম্ব ইউক্রেনসহ সে দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে৷

অবিলম্বে ‘লিওপার্ড ২’ ট্যাংক সরবরাহের জন্য জার্মানি সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে রয়েছে৷ অন্যান্য দেশ এমন ট্যাংক যাতে ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে পারে, কমপক্ষে সেই ছাড়পত্র দেবার জন্য জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসকে রাজি করানোর জোরালো প্রচেষ্টা চলছে৷ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাটেউশ মোরাভিয়েৎস্কি সোমবার বলেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনের হাতে ‘লেওপার্ড ২’ ট্যাংক তুলে দিতে জার্মানির অনুমতির জন্য আবেদন করবে৷ এমনকি জার্মানি সেই অনুমতি না দিলেও কয়েকটি দেশের সঙ্গে মিলে পোল্যান্ড সেই পদক্ষেপ নেবার হুমকি দিয়েছে৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক অবশ্য রোববার ফরাসি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, জার্মানি এমন অনুমতি দিতে প্রস্তুত৷

শলৎসের সরকার এখনো সরাসরি ট্যাংক সরবরাহের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি৷ গত শুক্রবার জার্মানির রামস্টাইনে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে পশ্চিমা শক্তিগুলির এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ইউক্রেনকে উন্নত ব্যাটেল ট্যাংক সরবরাহের প্রশ্নে ঐকমত্য সম্ভব হয়নি৷ জার্মানি এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে একই ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে৷ অর্থাৎ আমেরিকা ও ফ্রান্সের মতো দেশ ইউক্রেনকে একই ধরনের ট্যাংক সরবরাহ করলে তবেই ‘লেওপার্ড ২’ ট্যাংক হস্তান্তর করতে প্রস্তুত চ্যান্সেলর শলৎস৷ ওয়াশিংটন ও প্যারিস এখনো সেই প্রশ্নে দ্বিধায় ভুগছে৷ শলৎস সাফ বলে দিয়েছেন, জার্মানির নিজস্ব নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ফেলে কোনো রকম সহায়তা করা সম্ভব নয়৷

উল্লেখ্য, জার্মানির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও বিষয়টি নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে৷ একদল রাজনীতিক অবিলম্বে ইউক্রেনকে ট্যাংক পাঠানোর পক্ষে সওয়াল করছেন৷ অন্যরা রাশিয়াকে মাত্রাতিরিক্ত প্ররোচনা করে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছে৷

শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও জার্মানি আদৌ কত ট্যাংক সরবরাহ করতে সক্ষম, সে বিষয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে৷ তবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী গোষ্ঠী রাইনমেটাল জার্মানির আরএনডি মিডিয়া নেটওয়ার্ককে জানিয়েছে, যে তারা প্রয়োজনে ইউক্রেনকে ১৩৯টি লেওপার্ড ট্যাংক সরবরাহ করতে প্রস্তুত৷ এর মধ্যে এপ্রিল বা মে মাসের মধ্যে ২৯টি টুএফোর ট্যাংক পাঠানো সম্ভব৷ চলতি বছরের শেষ বা আগামী বছরের শুরুতে একই মডেলের আরও ২২টি ট্যাংক পাঠাতে পারে এই গোষ্ঠী৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোষ্ঠীর এক প্রতিনিধি আরও বলেন, যে ৮৮টি পুরানো ‘লেওপার্ড ১’ ট্যাংকও সরবরাহ করা সম্ভব৷

ইউক্রেনকে উন্নত ট্যাংক সরবরাহের ক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্বের বর্তমান দ্বিধাকে দুর্বলতা হিসেবে তুলে ধরছে রাশিয়া৷ ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ বলেন, ‘লেওপার্ড ২’ ট্যাংক নিয়ে টালবাহানা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘নার্ভাসনেস’ স্পষ্ট করে দিচ্ছে৷ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘প্রকৃত’ যুদ্ধ চালাচ্ছে৷ বহুকাল ধরেই সেই প্রস্তুতি চলছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, ডিপিএ, রয়টার্স

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.