পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পলিসি লেভেলে কাজ করতে হবে: ছায়েদুর রহমান

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান বলেন, তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি বা কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে আমাদের বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য পলিসি লেভেলে কাজ করতে হবে। বাজারের উন্নয়নের জন্য বিএসইসি (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করছে।

আগামী ৫ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) থেকে তিন দিনব্যাপী পুঁজিবাজার মেলা- অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩ উপলক্ষে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনলাইন নিউজ পোর্টাল অর্থসূচক এই এক্সপোর আয়োজন করছে। আগামী ৫-৭ জানুয়ারি তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে এই এক্সপো।

সংবাদ সম্মেলনে মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারের নেতিবাচক প্রবণতার ক্ষেত্রে কিছুটা পলিসিগত দিক থেকে আমরা মনে করি, সমস্যা আছে। সেই পলিসিগত বিষয়গুলো যতক্ষণ অ্যাড্রেস করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা সুশৃঙ্খল বা শক্তিশালী পুঁজিবাজার দেখবো, সেই প্রত্যাশা করতে পারি না। পলিসি লেভেলেও কাজ করার আছে। আমার জানা মতে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আন্তরিকভাবে কাজ করছে।

তিনি বলেন, বাজার যখন বেশি খারাপ হয়, তখনই ভালো হওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়। আপনারা সাক্ষী আছেন, ২০২০ সালের প্রথমদিকে বাজারের যে করুণ অবস্থা হয়েছিল, ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছিল, তখন কি কেউ ভাবতে পেরেছিলো ২০২০ সালের ক্লোজিং এত ভালো হবে? ২০২০ ও ২০২১ সালে পুঁজিবাজার কিন্তু যথেষ্ঠ ভালো অবস্থানে ছিল। আমাদের অর্থনীতি যে অবস্থায় আছে, তাঁর চেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রচার হয়েছে। হয়তো কেউ কেউ না জেনেও করেছে। আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে হতাশা ছিল। অথচ গত মাসে আমাদের রপ্তানি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ সময় ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি। অর্থসূচকের এই এক্সপো পঞ্চম বারের মতো হচ্ছে। আমাদের বাজারে ৮০ শতাংশ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের প্রভাব রয়েছে। তবে এসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা কার্যক্রম আনুপাতিক হারে কম। স্টক মার্কেট একটি সংবেদনশীল জায়গা। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে। এই ধরনের এক্সপোগুলো পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠান ও প্রকারের হাউজ এই এক্সপোতে আসে তারা কি কি সার্ভিস দিতে পারে ও ইনফরমেশন পেতে পারে তা নিয়ে কাজ করে। রিসার্চ টিম ক্লায়েন্টদের হেল্প করে। এই ধরনের এক্সপো পুঁজিবাজারের জন্য পজিটিভ আবহাওয়া তৈরি করে। আমাদের পুঁজিবাজার বর্তমানে খুবই ক্রান্তি কাল সময় কাটাচ্ছে। এই সময় আমাদের খুবই ধৈর্য ধরতে হবে। এছাড়া আমাদের বিনিয়োগের দিকে মনোযোগী হতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি বাছাই করতে হবে।

অর্থসূচক সম্পাদক ও সিএমজেএফ’র সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ বলা যাবে না। তবে পুঁজিবাজারে এই এক্সপো বিনিয়োগ শিক্ষার একটি বড় প্ল্যাটফর্ম। সেমিনারগুলোই এক্সপের প্রাণ। এক্সপো হলে আমরা নিউজ করে মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে পারি। সেমিনারের দেশের সেরা বক্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে বর্তমান ও সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা গাইডলাইন পেয়ে থাকবেন। এছাড়া আমাদের পলিসি মেকাররা পলিসি তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সহায়তা পাবেন।

তিনি বলেন, এবার পঞ্চমবারের মতো ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে অর্থসূচকের উদ্যোগে এই এক্সপো শুরু হয়। মাঝখানে জাতীয় নির্বাচন এবং করোনাভাইরাসের কারণে ৩ বছর এই এক্সপো অনুষ্ঠিত হয়নি। পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থার উত্তরণে সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা খুবই জরুরি। কারণগুলো চিহ্নিত করা গেলে করণীয় ঠিক করা সহজ হবে। ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোতে অনুষ্ঠেয় বিভিন্ন সেমিনারে অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে। অন্যদিকে এক্সপোতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্টলে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে।

পুঁজিবাজার যে খারাপ সময় পার করছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অবশ্যই এই বাজার তার গতিশীলতা ফিরে পাবে। এর জন্য সব স্টেকহোল্ডারকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সামগ্রিক বাজারের গভর্ন্যান্সের মান বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি নিয়ে অতিমাত্রায় যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তা কমানোর চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি, বিনিয়োগ শিক্ষাকেও জোরাল করতে হবে। কারণ বিনিয়োগকারীরা আরও সচেতন এবং সতর্ক হলে দুষ্টচক্র সহজে কারসাজি করতে পারবে না। অন্যদিকে হুজুগ ও গুজব কমে আসবে। এসব বিষয়ে এবারের এক্সপো কিছুটা ভূমিকা রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, এ সময় আরও একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে এবারের ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনারা জানেন, প্রথমে করোনাভাইরাস অতিমারি এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঘাতে বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। কালো মেঘের ছায়া আমাদের আকাশেও। আমাদের অর্থনীতিতেও দেখা যাচ্ছে নানা চাপ। তবে অর্থনীতির চেয়ে বেশি নাজুক অবস্থা আমাদের পুঁজিবাজারের। গত দুই দশকে এতটা নাজুক অবস্থায় কখনো ছিল না এই বাজার। যেখানে দৈনিক গড়ে এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন না হলে ব্রোকারহাউজ ও স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন ব্যয় উঠে আসে না, সেখানে লেনদেন নেমে এসেছে ২শ কোটি টাকায়। সেকেন্ডারি বাজার গতিশীল না থাকায় মার্চেন্টগুলোর প্রধান যে কাজ, বাজারে বেশি বেশি নতুন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আসা, সেটিও ব্যাহত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে দুর্দশায় আছেন বিনিয়োগকারীরা। ব্যক্তি বিনিয়োগকারী, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান-সবারই নাজুক অবস্থা। বাজারের এই অবস্থার পেছনে বৈশ্বিক অবস্থা অনেকাংশে দায়ী। তবে আরও কিছু বিষয় হয়তো আছে। কারণ আমাদের অর্থনীতিতে বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব যতটা পড়েছে, পুঁজিবাজারের অবস্থা তারচেয়ে নাজুক। অন্যদিকে বিদ্যমান বৈশ্বিক অবস্থার মধ্যেও আমরা ভারতসহ বেশ কিছু দেশের পুঁজিবাজারে ভাল পারফরম্যান্স দেখেছি।

আগামী বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ) রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে এবারের এক্সপো শুরু হবে। এদিন সকাল ১০ট ৩০ মিনিটে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি প্রধান অতিথি হিসেবে এই এক্সপো উদ্বোধন করবেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম, বাংলাদেশ পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএপিএলসি) প্রেসিডেন্ট আনিস উদ দৌলা, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এর প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও।

আগামী শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় এক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

এক্সপোতে বিএসইসি, সিডিবিএল, বিআইসিএম, বিএএসএম, আইসিএবি, আইসিএমএবি, আইসিএসবি, ব্রোকারহাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, লিস্টেড কো্ম্পানি, সম্পাদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানসহ ৩৫টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। তিনদিনের এক্সপোতে উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন বিষয়ের উপর চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এসব সেমিনারে বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইর শীর্ষ কর্মকর্তা, খ্যাতনামা স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, অ্যাসেট ম্যানেজার, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট প্রমুখ অংশ নেবেন।

অর্থসূচক ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো-২০২৩ এ কো-পার্টনারদের মধ্যে আছে- বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম), বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম), ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি), ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস,বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)।

ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো ২০২৩ এর স্পন্সর হিসেবে রয়েছে- সাইফ পাওয়ারটেক, দেশবন্ধু গ্রুপ ও বিবিএস ক্যাবল।

পার্টনারদের মধ্যে রয়েছে, আইটি পার্টনার-আমরা নেটওয়ার্কস, হসপিটালিটি পার্টনার হোটেল গ্রেফার ইন (কুয়াকাটা)।

ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপো সকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে। এক্সপোতে প্রবেশের জন্য কোনো টিকিট লাগবে না। উল্টো প্রবেশ কূপনের র‍্যাফেল ড্রতে থাকবে মূল্যবান সব পুরস্কার।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.