সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমছে

বেশ কয়েক বছর ধরে হু হু করে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। তবে বর্তমানে নানা শর্তের কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে মানুষ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৪৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৬৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে নীট ৬৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণাত্মক রয়েছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সরকারের পক্ষ থেকে অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে আয়কর রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা এবং ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধানের কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছেন বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে ৬ হাজার ৫৩৩ কোটি ১৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৭ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৩ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্বক) দাঁড়িয়েছে ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ অক্টোবরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেয়ার চেয়ে পরিশোধ করেছে বেশি।

এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৪৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৬৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। সে হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে নীট ৬৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণাত্মক রয়েছে। গত অর্থবছরে একই সময় নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এবছর ১০৬ শতাংশ কম ঋণ নিয়েছে সরকার।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এর আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে এক লাখ ৮ হাজার ৭০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে। এর মধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয় ৮৮ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট ঋণ ছিল ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। যা বাজেট ঘাটতি মেটাতে এখাতের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৩ শতাংশ কম। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।

এর আগে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্রের বিক্রির কমাতে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়ে আসছে সরকার। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে আয়কর রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এসব কড়াকড়ির প্রভাব পড়েছে সঞ্চয়পত্রে বিক্রির ওপর।

অর্থসূচক/এমএইচ

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.