বাজার বাড়ছে বন্ড মার্কেটের

বন্ড মার্কেট বড় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি সরকারি বন্ড দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যার পরিসর ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে ব্যাংকগুলো দ্বিধাহীনভাবে বিনিয়োগ করছে না। সবাই মার্কেট যাচাইয়ের জন্য সময় নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা। যা এর আগের বছর ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা বেশি। কারণ ২০২০ সালে বন্ডে বিনিয়োগ ছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুনে এর পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৩ কোটি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকার থেকে সরবরাহ করা এসব বন্ডে প্রাইমারি ডিলার্স ব্যাংকের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, পুরো বন্ড মার্কেটের ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ প্রাইমারি ডিলারদের দখলে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে নন-প্রাইমারি ডিলার্সরা। বন্ড মার্কেটে তাদের বিনিয়োগ ১ লাখ ৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা। হিসাব অনুযায়ী এই অঙ্ক মোট বিনিয়োগের ৩২ দশমিক ৪৯ ভাগ। এদিকে ২৫ হাজার ৯৬ কোটি টাকার বা ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ সরকারি বন্ড কিনে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এর বাইরেও বন্ড মার্কেটে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১১৮ কোটি, বিমা তহবিলের ১০ হাজার ৬৪২ কোটি, সাধারণ বিমা কোম্পানির ৩০২ কোটি, জীবন বীমার ১৮ হাজার ৬৬৬ কোটি, বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানির ১ হাজার ৮৫ কোটি, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ২৭ কোটি, প্রোভিডেন্ট ফান্ডের ৮ হাজার ৭২৬ কোটি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ২৫১ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে।

উল্লেখ, প্রাইমারি ডিলার্স হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে ২২টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- এবি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, যমুনা ব্যাংক লিমিটেড, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড, মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড, মধুমতি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড, পদ্মা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।

অপরদিকে নন-প্রাইমারি ডিলার্সের তালিকায় রয়েছে ২৫ ব্যাংক। এগুলো হলো-বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ব্যাংক আল-ফালাহ লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া, ব্যাসিক ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সাইক্লোন লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক,  স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড, দ্য হংকং অ্যান্ড সংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশন, ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং ওয়ারি ব্যাংক।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘পুঁজিবাজার বলতে আমরা শুধু মূলধনি (ইকুইটি) বাজারকেই বুঝি। কারণ, আমাদের এখানে বন্ড বাজার তৈরি হয়নি। তাই আমরা বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে দেখলাম এক ব্যাংকের বন্ড শুধু অন্য ব্যাংক কিনছে। আমি সেটি পরিবর্তন করে নিয়ম করেছি, ব্যাংকের বন্ডের ৫০ শতাংশ ব্যাংকের বাইরে বিক্রি করতে হবে। কারণ, ব্যাংকের বন্ড অত্যন্ত নিরাপদ। অতীতে কোনো ব্যাংক বন্ডের সুদ বা টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়নি। আগামী ৫০ বছরেও হবে না।’

অর্থসূচক/এমএইচ/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.