নুরানী ডায়িংয়ের পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও অডিটরের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান নুরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইপিওতে মিথ্য তথ্য প্রদান ও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে। এ ঘটনায় কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালক, ইস্যু ম্যানেজার ও নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আজ বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির ৮৩৮তম কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ, ২০২৭ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৪৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করে নুরানী ডায়িং অ্যান্ড সোয়েটার কোম্পানি লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর থেকেই কোম্পানিটির পারফরম্যান্স খারাপ যাচ্ছে। খুবই দুর্বল মৌলের কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে কারসাজি করে লাভজনক দেখিয়ে পুঁজিবাজারে আনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

বেশ কিছুদিন ধরে কোম্পানিটি সম্পর্কে নানা নেতিবাচক খবরের প্রেক্ষিতে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একটি প্রতিনিধি দল কোম্পানিটি পরিদর্শনে গেলে তাদেরকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির হস্তক্ষেপে দ্বিতীয় দফায় কোম্পানিটি পরিদর্শন করতে সক্ষম হয় ডিএসইর প্রতিনিধি দল।

ডিএসইর প্রতিনিধি দল কোম্পানিটির কার্যক্রম বন্ধ দেখতে পায়। এছাড়াও নানা অনিয়ম-অসঙ্গতি উঠে আসে তাদের পর্যেবক্ষণে। ডিএসই তাদের ওই পরিদর্শন প্রতিবেদন বিএসইসির কাছে পাঠালে তার আলোকে আজ কমিশন বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আইপিওতে আসার সময় নুরানী ডায়িংয়ের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন যথাক্রমে, রেহানা আলম ও শেখ নুরুল আলম। আর পরিচালক হিসেবে ছিলেন শেখ নুর মোহাম্মদ আজগর।

আজকের কমিশন বৈঠক শেষে দেওয়া বিএসইসির প্রেসরিলিজে উল্লেখ করা হয়েছে, আইপিওর প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুসারে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে কোম্পানিটির দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ (এবি ব্যাংক) ছিল যথাক্রমে ৫৭ কোটি ২০ লাখ ও ৪২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। কিন্তু বাস্তবে এর পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। ডিএসইর সংগ্রহ করা তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে ঋণ ছিল ১৬৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, ২০১৯ সালে ১৯২ কোটি ৬৮ লাখ এবং ২০২০ সালে ঋণ ছিল ২১৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এতে প্রতীয়মান হয়, কোম্পানিটি ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে প্রকৃত আর্থিক তথ্য আড়াল করে করে যা প্রতারণার সামিল।

আইপিওর মাধ্যমে সংগ্রহ করা ৪৩ কোটি টাকা থেকে বিভিন্ন কারসাজি স্কিম/ডিভাইসের মাধ্যমে ব্যাংক বিবরণীর জালিয়াতি, এমটিডিআর নগদায়ন এবং কোনো কাজ/পরিষেবা ছাড়াই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ৪১ কোটি ১৪ লাখ আত্মসাৎ করেছে।

তিন ইস্যু ম্যানেজারের দায় সম্পর্কে বিএসইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির ইস্যু ব্যবস্থাপনায় জড়িত ৩টি ইস্যু ম্যানেজার

Bangladesh Securities and Exchange Commission (Public Issue Rules), 2015 এর Rules-4 (1) (D) অনুযায়ী Due Diligence Certificate প্রদানের মাধ্যমে প্রসপেক্টাস ও এতদসংক্রান্ত তথ্যের সত্যতার নিশ্চয়তা দেয়,যা পরবর্তীতে কোম্পানিটি প্রকৃত আর্থিক তথ্য গোড়ন করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারী ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) চাঁদায় অংশগ্রহণকারীগণ বিভ্রান্তিকর তথ্য পেয়ে প্রতারিত হন।

২০১৯ ও ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ইস্যুয়ার কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হিসাব বিবরণীর রপ্তানি আয়, বিক্রয় ও দেনাদারের স্বপক্ষে বিভিন্ন প্রমাণপত্র, যেমন- পিআরসি, টিডিএস সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি কাগজপত্র জালিয়াতি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয় বলে মনে করছে ডিএসই ও বিএসইসি।

এছাড়া কোম্পানিটির উদ্যোক্তা/পরিচালকেরা তাদের ধারনকৃত ৩০.৯৩% শেয়ার যমুনা ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের কাছে জামানত রেখে মার্জিন ঋণ গ্রহণ করে তসরুফ করে। এই মার্জিন ঋণ পরবর্তীতে খেলাপীতে পরিণত হয়।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইস্যু ম্যানেজার দাবি করেছেন, তারা কোনো জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত নন। কোম্পানি ঋণ ও লেনদেন সংক্রান্ত যে ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়েছে, সেগুলোর সত্যতা যাচাই করার সুযোগ তাদের ছিল না। কারণ ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্যে ইস্যু ম্যানেজারদের কোনো প্রবেশাধিকার থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা ২০১৫ ও ২০১৬ সালের অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে কাজ করেছি। তখন এবি ব্যাংকের পক্ষ থেকে নো-অবজেকশনও দেওয়া হয়েছে। আর ২০১৭ সালে কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদিত হয়েছে। আর ডিএসইর প্রতিবেদনে ঋণের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তা ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালের। ওই সময়ের কোনো কর্মকাণ্ড বা তথ্যের দায় কোনোভাবেই ইস্যু ম্যানেজারের উপর বর্তায় না। কারণ আইপিও’র পর কোনো কোম্পানির সাথে ইস্যু ম্যানেজারের কোনো যোগাযোগ থাকে না বা কার্যক্রম মনিটর করা যায় না।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.