ইবিএল সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ

দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্রোকারহাউজ ইবিএল সিকিউরিটিজের একজন প্রাক্তন গ্রাহক পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ, ওই গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও নানা ভুল তথ্য দিয়ে ইবিএল সিকিউরিটিজের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সম্প্রতি মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করা হয়েছে।

জানা গেছে, মো. আলমাস হোসেন তুহিন নামের ওই বিনিয়োগকারী গত ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে ইবিএল সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।

এই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ইবিএল সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সব গ্রাহকের কাছে স্মলক্যাপ বোর্ডের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের লক-ইন উঠে যাওয়ার সময়সূচি সংক্রান্ত এসএমএস পাঠানো হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বাজারে এসএমই বোর্ডের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে কমে যায়। তাতে তার ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

তিনি দাবি করেছেন, ইবিএল সিকিউরটিজ বিভিন্ন কোম্পানির লক-ইন উঠতে যাওয়ার যে হিসাব দেখিয়েছে, তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ারও রয়েছে। কিন্তু আইন অনুসারে, উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার একসাথে বিক্রি করা যায় না।
আলমাস হোসেন তুহিন বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে ওই অভিযোগপত্রের কপি পোস্ট করেছেন।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর তাদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা তুলে ধরার বিষয়টিকে অসৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মনে করছে ইবিএল সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে ওই গ্রাহক লিংক অ্যাকাউন্ট করে ইবিএল সিকিউরিটিজ থেকে তার সব শেয়ার অন্য ব্রোকারহাউজে সরিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে ইবিএল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ছায়েদুর রহমান বলেন, ওই গ্রাহকের সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, বিএসইসির কাছে অভিযোগ করার বিষয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ বিএসইসি বিনিয়োগকারীসহ পুরো বাজারের অভিভাবক। কেউ কোনো অন্যায়ের শিকার হয়েছেন মনে করলে, তিনি বিএসইসির কাছে প্রতিকার চাইতেই পারেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অভিযোগ করলে, তাদেরকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। কিন্তু তিনি তা না করে সাথে সাথে ওই অভিযোগপত্র ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি একদিকে তাদের (ইবিএল সিকিউরিটিজ) সুনামহানী ঘটিয়েছেন, অন্যদিকে বাজারেরও ক্ষতি করেছেন। কারণ এ ধরনের অপপ্রচারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়।

শেয়ারের লক-ইন সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, একটি পেশাদার ব্রোকারহাউজের দায়িত্ব হচ্ছে কোম্পানি, পুঁজিবাজার ও অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আপডেট থাকা এবং তার গ্রাহকদেরকে আপডেট রাখা। তারা এই দায়িত্বটুকুই পালন করেছেন মাত্র। শেয়ারের দাম বাড়বে-কমবে এমন কোনো মন্তব্য করেননি, কাউকে শেয়ার কিনতে বা বেচতে পরামর্শও দেননি। গ্রাহকদেরকে আপডেট রাখা কোনোভাবেই অন্যায় বা অপরাধ হতে পারে না। অথচ তিনি (আলমাস হোসেন তুহিন) তার অভিযোগপত্রে এটিকে অপরাধ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

এ বিষয়ে মো. আলমাস হোসেন তুহিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজী হননি।

এদিকে আলমাস হোসেন তুহিনের অভিযোগপত্রের তার পোর্টফোলিওর তথ্যের মিল নেই বলে জানা গেছে। আলমাস হোসেন তুহিন বিএসইসির কাছে করা অভিযোগে ১৭ আগস্ট ২০২২ তারিখে তার অ্যাকাউন্টে ৪২ লাখ ১৩ হাজার টাকার শেয়ার থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার পরিমাণ ছিল ৩৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ২১ আগস্ট যার পরিমাণ বেড়ে ৪০ লাখ ৮৪ হাজার টাকায় ওঠে আসে।

অন্যদিকে, ওই বিনিয়োগকারী অভিযোগে ২৪ আগস্ট তার পোর্টফোলিওতে শেয়ারের দাম কমে ৩৮ লাখ ১৭ হাজার টাকায় নেমে আসার কথা উল্লেখ করলেও ওইদিন পোর্টফোলিওতে মোট ৩৯ লাখ ২২ হাজার টাকার শেয়ার ছিল।

আলোচিত বিনিয়োগকারী ১৭ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট সময়ে ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করলেও বাস্তবে শেয়ারের দাম বেড়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।”

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.