ডলারে অতিরিক্ত মুনাফা: এবার ৬ ব্যাংকের এমডিকে শোকজ

ডলার নিয়ে কারসাজির মাধ্যমে অতিরিক্ত মুনাফার অভিযোগে এবার ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) শোকজ করল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ছয়টি হলো: ডাচ-বাংলা, সাউথইস্ট, প্রাইম, সিটি, ব্র্যাক ও বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

বুধবার (১৭ আগস্ট) ব্যাংকগুলোর এমডিদের এই চিঠি দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যাংকে পরিদর্শন করা হবে; যদি প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ছয় ব্যাংকের ট্রেজারি-প্রধানদের অপসারণের নির্দেশ দিয়ে প্রত্যেক ব্যাংকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই দিনে আরেকটি চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে ডলার বিক্রির অতিরিক্ত মুনাফা নেয়া যাবে না ব্যাংকের আয় খাতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ডলারে অস্বাভাবিক মুনাফার তালিকায় আরও প্রায় এক ডজন ব্যাংক আছে। এসব ব্যাংককে তদারকির আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য সব ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছে। এই তালিকায় ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল, মার্কেন্টাইল, ঢাকা, এনসিসি, শাহজালাল ও ইর্স্টার্ণ ব্যাংকের নাম রয়েছে বলেও জানা গেছে। এসব ব্যাংক ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাস বা জানুয়ারি-জুনের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে ডলারে অতিরিক্ত অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে উঠে এসেছে।

ব্যাংকগুলোর বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, বিদেশি মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ। আবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে কোনো কোনো ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোন ব্যাংক কী পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করতে পারবে, তার একটি সীমা (এনওপি-নেট ওপেন পজিশন) নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।

আগে ব্যাংকের রেগুলেটরি ক্যাপিটালের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রা সংরক্ষণ করার সুযোগ ছিল। ডলার বাজারের অস্থিরতা কমাতে গত ১৫ জুলাই তা কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সীমার বেশি ডলার হাতে থাকলে তা বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংকের কাছে বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ব্যাংকগুলোর। রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার মধ্যে গত বছরের শেষ দিক থেকে ডলারের দাম বাড়ছিল। এ বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে খোলা বাজারে ডলারের বিনিময় হার প্রথমবারের মত ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় বাজারে ডলার ছাড়ার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় সেসময় পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবার বাড়তে থাকে ডলারের দাম। বাড়তে বাড়তে খোলাবাজারে গত সপ্তাহে তা ১২০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। আর ব্যাংকগুলোও বাড়তি দামে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করায় আমদানিকারকদের বিল মেটাতে চড়া দাম নিচ্ছে। ওই সময়ই মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেউ যাতে দাম বাড়ানোর জন্য ডলার মজুদ না করে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। একই সময়ে ব্যাংকগুলোতেও পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব পরিদর্শনের পর খোলাবাজারে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ১৩৫টি মানি চেঞ্জারে অভিযান চালিয়ে ৪২টিতে অনিয়ম পাওয়ায় কারণ দর্শানোর (শো কজ) নোটিস দেওয়া হয়। এছাড়া পাঁচটি মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিতের কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুনাফা করার অভিযোগে ছয় ব্্যাংকের ট্রেজারি প্রধানকে অপসারনের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে এখন ডলারের দাম কিছুটা কমে এসেছে। বুধবার খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৩ টাকায়। আর আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলার ৯৫ টাকায় বিনিময় হয়েছে।

অর্থসূচক/এএইচআর/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.