ইউরোপের পরমাণু কেন্দ্রে আবারও হামলা

ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও হামলার ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে এই হামলার জন্য আবারও একে অপরকে দায়ী করছে ইউক্রেন এবং রাশিয়া। অন্যদিকে ইউরোপের সর্ববৃহৎ এই পারমাণবিক স্থাপনায় নতুন করে হামলার ঘটনায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

শুক্রবার (১২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ইউরোপের বৃহত্তম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিস ও ফায়ার স্টেশনে ১০টি হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এছাড়া জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে বলেছেন, এটি একটি ‘গুরুতর সময়’।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বলেছেন, এটি (জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও হামলা) ‘বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে’। এছাড়া ইউক্রেন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে এই ধরনের হামলা বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পারমাণবিক দুর্ঘটনাকে উস্কে দিতে পারে।

একইসঙ্গে পারমাণবিক এই স্থাপনাটি ইউক্রেনের কাছে হস্তান্তর করতে বুধবার রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নেতৃস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট গ্রুপ অব সেভেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক জোট ন্যাটোকে ঘিরে দ্বন্দ্বের জেরে সীমান্তে আড়াই মাস সেনা মোতায়েন রাখার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার দু’দিন আগে ইউক্রেনের রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চল দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন তিনি।

এরপর গত মার্চের শুরুতে যুদ্ধের প্রথম দিকেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ স্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও এই স্থাপনা এখনও ইউক্রেনীয় প্রকৌশলীরা পরিচালনা করছেন। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর শুক্রবার ফের এই পারমাণবিক স্থপনায় হামলার খবর সামনে এলো।

এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চারপাশে নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘পরমাণু কেন্দ্রের কাছে যুদ্ধ করা বিপজ্জনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।’

বিবিসি বলছে, ইউরোপের সর্ববৃহৎ এই পারমাণবিক স্থাপনাসহ ভৌগলিকভাবে কেন্দ্রীয়-পূর্ব ইউক্রেনের আশপাশের এলাকায় গত সপ্তাহে ব্যাপক গোলাবর্ষণ দেখা গেছে। আর সেই হামলার জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে রাশিয়া এবং ইউক্রেন।

ইউক্রেন বলেছে, রাশিয়া এই পারমাণবিক স্থাপনাটিকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। রুশ সেনারা সেখান থেকে আক্রমণ করছে এবং তারা এটা জানে যে, (পারমাণবিক স্থপনা হওয়ায়) ইউক্রেনীয় বাহিনীর পাল্টা হামলা বা প্রতিশোধ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

তবে ইউক্রেনের এই দাবি অস্বীকার করছে মস্কো।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের পারমাণবিক সংস্থা এনারহোয়াটম বলেছে, ‘রাশিয়ান আক্রমণকারীরা আবার জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্ট এবং পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছাকাছি অঞ্চলগুলোতে গোলাবর্ষণ করেছে।’

এতে বলা হয়, ওয়েল্ডিং এলাকার কাছে একটি প্রশাসনিক অফিসে গোলা আঘাত হেনেছে এবং বেশ কয়েকটি রেডিয়েশন সেন্সর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাছাকাছি কিছু ঘাসে ছোট আগুন লাগলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

এনারহোয়াটম আরও বলেছে, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাছে অবস্থিত ফায়ার স্টেশনটিও হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। এছাড়া গোলাবর্ষণের কারণে পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্মীদের পরিবর্তন করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের ওভারটাইম কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে রুশ-নিযুক্ত কর্মকর্তারাও একই ধরনের একটি বিবৃতি জারি করে গোলাবর্ষণের জন্য ইউক্রেনকে অভিযুক্ত করেছে। তারা বলেছে, হামলার সময় ইউক্রেনীয় বাহিনী একাধিক রকেট সিস্টেম এবং ভারী কামান ব্যবহার করেছে।

তবে উভয়পক্ষের এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এদিকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে (আইএইএ) জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি।

বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক সিটিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় বক্তৃতার সময় গ্রোসি বলেন, ‘এটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, গুরুতর সময় এবং আইএইএকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জাপোরিঝিয়াতে তার মিশন পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া উচিত।’

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.