সমালোচনার মুখে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনে সংশোধনী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ব্যাংকের খেলাপি হওয়া কোনো ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতফসিল করা যাবে। আর ঋণ পুনঃতফসিলের পর ৬ মাস কিস্তি না দিলে আবার তা খেলাপি হয়ে পড়বে। প্রকৃত আদায় ছাড়া পুনঃতফসিল করা ঋণের সুদ আয় খাতে নেওয়া যাবে না। সব ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুনঃতফসিল করা কোনো ঋণ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে খেলাপি করলে সেই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।

নানা সমালোচনার মুখে ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের নীতিমালায় সংশোধনী এনে এসব বিধান যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (৩ আগস্ট) নতুন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব সংশোধনী যুক্ত করা হয়েছে। গত ১৮ জুলাই ঋণ খেলাপিদের গণ ছাড় দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের নতুন নীতিমালা জারি করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

তবে আগের মতো এককালীন জমা ও ঋণের মেয়াদ বহাল রাখা হয়েছে নতুন নীতিমালায়। নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন আড়াই থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ জমা দিলেই চলবে। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি এসব ঋণ পাঁচ থেকে আট বছরে পরিশোধ করা যাবে। আগে এসব ঋণ শোধ করতে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া হতো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশোধনী অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ তিনবার পুনঃতফসিল করা যাবে। গ্রাহকের নিয়ন্ত্রণবহির্ভুত কারণে ব্যবসা ক্ষতিতে পড়লে বিশেষ বিবেচনায় চতুর্থবার পুনঃতফসিল করা যাবে। এরপরও খেলাপি হলে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন কোন ঋণ অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর হলেও আগের পুনঃতফসিলের ধারা প্রযোজ্য হবে। এসব ঋণের সুদ ও আসল ৬ মাস আনাদায়ী থাকলে তা খেলাপি করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুনঃতফসিল করা ঋণ হিসাবের বিপরীতে স্থগিত সুদ হিসাবে রক্ষিত এবং পুনঃতফসিলের পর আরোপিত সুদ প্রকৃত আদায় ছাড়া ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকৃত ঋণ ৩য় ও ৪র্থ বার পুনঃতফসিল করার ক্ষেত্রে প্রকৃত আদায় না করে সংরক্ষিত প্রভিশন ব্যাংকের আয় খাতে নেওয়া যাবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ঋণ পুনঃতফসিলে সব শর্ত পরিপালন হয়েছে কিনা যাচাই করবে। যাচাই শেষে যে সিদ্ধান্ত উপনীত হবে তা চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। পুনঃতফসিল পরবর্তীতে আসল এবং সুদ মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সমান কিস্তিতে আদায় করতে হবে। ৬টি মাসিক বা ২টি ত্রৈমাসিক কিস্তি অনাদায়ী হলে পুনঃতফসিল করা ঋণ সরাসরি ক্ষতিজনক মানে শ্রেণিকরণ করতে হবে।

আগের নির্দেশনায় সব ঋণ পুনঃতফসিল পরিচালনা পর্ষদ বা নির্বাহী কমিটির অনুমোদনের কথা বলা হয়েছিল। তবে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ হওয়ায় এক্ষেত্রে শিথিলতা এনে বলা হয়েছে, ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন করার ক্ষেত্রে ঋণ অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নূন্যতম এক স্তর ওপরের পর্যায় থেকে অনুমোদিত হতে হবে। তবে সব ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে। আর পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করা ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠন ওই পর্যায় থেকেই হতে হবে। বিদেশি ব্যাংকের ক্ষেত্রে কান্ট্রি ম্যানেজমেন্ট টিম অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত সমজাতীয় কমিটি অনুমোদন করবে। কৃষি, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র ঋণ ছাড়া অন্যান্য ঋণ যে পর্যায় থেকেই অনুমোদিত হোক ৩য় ও ৪র্থ বার পুনঃতপশিলের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে।

 

অর্থসূচক/এএইচআর/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.