ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে অভিযান

ডলারের বাজারে চলমান অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে এবার অনলাইনে ফরেক্স ট্রেডিং বা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয়- এমন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার নিয়ে কোনো অনিয়ম পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।

এর আগে, বাণিজ্যিক ব্যাংক, মানি এক্সচেঞ্জ হাউস ও খোলাবাজারে পরিদর্শন করা হয়েছে।

রোববার (৩১ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি পরিদর্শন টিম এই অভিযান পরিচালনা করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেন হয় এমন সব প্রতিষ্ঠানে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের ২টি পরিদর্শন টিম গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান হুন্ডি বা অন্য কোনো ব্যবস্থায় ডলার কেনাবেচা করছে কি না পরিদর্শন টিম দেখবে। যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় সে রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কাদের লাইসেন্স দিয়েছে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া ডলার কেনাবেচা করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিলগালা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অপরাধের ধরন অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত হতে পারে।

ডলারে অনিয়ম পেলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, আগে আমরা ১০টি টিম মার্কেটে পাঠিয়েছিলাম। মার্কেটে গিয়ে তারা কিছু তথ্য পেয়েছে। যা রুলস রেগুলেশন কভার করে না। যাদের লাইসেন্স আছে তারা ছাড়াও অনেকে ডলার কেনাবেচনার সঙ্গে জড়িত পাওয়া গেছে। এমনও পাওয়া গেছে একটি লাইসেন্স নিয়েছে গুলশানে তাদের আরেকটা শাখা হয়তো মিরপুরে আছে। যারা এমন ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে কাদেরকে আমরা লাইসেন্স দিয়েছি। তাছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া যারা কাজ করছে তাদের অপরাধের ধরন অনুযাযী কোনোটা বাতিল হতে পারে, কোনোটা স্থগিত হতে পারে।

জানা গেছে, আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজার বা ব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার কেনাবেচা নিয়ে অন্থিরতা চলছে মুদ্রাবাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কেবলই কমছে। এক মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য খরচ করতে হয়েছে ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা। তবে সব ব্যাংকেই নগদ ডলারের দাম বেড়ে ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১০৫-১০৮ টাকায় বিক্রি করছে। কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে মঙ্গলবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১১২ টাকায় বেচাকেনা হয় ডলার।

বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরু করলে বাজারের পরিস্থিতি পাল্টে যায়। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে হিসাবের বাইরে খোলাবাজারের মতো আগে ডলার বেচাকেনা হতো। সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলার বেচাকেনায় অনিয়ম পেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০টি তদারকি দল মার্কেটে পরিদর্শন করে কিছু তথ্য পেয়েছে। দেখা গেছে, যাদের লাইসেন্স আছে তারা ছাড়াও অনেকে ডলার কেনাবেচনার সঙ্গে জড়িত। যারা এমন ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে জরুরিভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ডলার সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ডলার সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ১১৪ কোটি বা ১.১৪ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সরকারের জরুরি খাতগুলোর পণ্য আমদানির জন্য রিজার্ভ থেকে সাপোর্ট দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.