নাভানা গ্রুপের সাথে ‘নাভানা ফার্মা’র কোনো সম্পর্ক নেই

বুকবিল্ডিং পদ্ধতির প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে দেশের অন্যতম শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ‘নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’। এই পদ্ধতির আওতায় ‘যোগ্য বিনিয়োগকারী’ তথা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত কোটার শেয়ার বিক্রি করার লক্ষ্যে আগামীকাল সোমবার (৪ জুলাই) শুরু হবে ইলেকট্রনিক পদ্ধতির নিলাম।

আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি মোট ৭৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে ১৫ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে যে দামে সংরক্ষিত শেয়ার বিক্রি শেষ হবে, ওই দামের (Cut-off price) উপর ৩০ শতাংশ ছাড় দিয়ে পরবর্তীতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করা হবে।

কোম্পানিটির আইপিও নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেলেও নাম বিভ্রাটজনিত জটিলতায় কিছু ভুল বুঝাবুঝিও আছে বিনিয়োগকারীসহ অনেক স্টেকহোল্ডারের মধ্যে। অনেকেরই ধারণা নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়া ‘নাভানা গ্রুপের’ একটি কোম্পানি। কোনো কোনো বিনিয়োগকারী অর্থসূচকে ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। কেউ কেউ উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

জানা গেছে, নাভানা গ্রুপের সাথে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোনো সম্পর্ক নেই। আগেও কোনো সম্পর্ক ছিল না। বর্তমান মালিকদের নিয়ন্ত্রণে আসার আগে এটি দেশের কিংবদন্তীতুল্য শিল্প উদ্যোক্তা প্রয়াত জহুরুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত ‘ইসলাম গ্রুপ’ এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ছিল। জহুরুল ইসলামের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ ভাগাভাগি হলে আফতাব গ্রুপ ও নাভানা গ্রুপ নামে দুটি আলাদা গ্রুপের জন্ম হয়। জহিরুল ইসলামের ভাই শফিউ্ল ইসলাম কামাল নাভানা গ্রুপের কর্ণধার। আফতার গ্রুপের কর্ণধার ছিলেন তাঁর আরেক ভাই আজহারুল ইসলাম। অন্যদিকে তাঁর ছেলে ও মেয়েদের মালিকানায় রয়ে যায় ইসলাম গ্রুপ। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস ছিল ইসলাম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।

ইসলাম গ্রুপ ২০২০ সালে অক্টোবর মাসে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির বর্তমান পরিচালকদের মধ্যে বিক্রি করে দেয়। কোম্পানিটির বর্তমান চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ মোট শেয়ারের (প্রি-আইপিও) ৫ শতাংশ।  ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রফেসর ডাক্তার মোঃ জোনায়েদ শফিক ধারণ করছেন ৯.০২ শতাংশ শেয়ার। পরিচালকদের মধ্যে মাসুমা পারভীন ৯.৮৪ শতাংশ, ইমরানা জামান চৌধুরী ৫ শতাংশ, ডাক্তার জাহারা রসুল এমডি, সিসিএফপি ৬ শতাংশ, জাভেদ কায়সার আলী ৩.১২ শতাংশ, ডাক্তার সায়িদ আহমেদ ৩.২৯ শতাংশ এবং তারানা আহমেদ ৩.১২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন।

২০২০ সালে নাভানা গ্রুপের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তি

নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের পর্ষদে থাকা একমাত্র উদ্যোক্তা-পরিচালক হচ্ছেন ইসলাম গ্রুপের কর্ণধার মঞ্জুরুল ইসলাম। তাঁর ধারণকৃত শেয়ারের পরিমাণ ৩.১২ শতাংশ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোম্পানি সচিব জয়নাল আবেদিন অর্থসূচককে বলেন, নাভানা গ্রুপের সাথে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। এটি মরহুম জহুল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত একটি কোম্পানি। এক সময় এই কোম্পানি ইসলাম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ব্যবসা পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনে ইসলাম গ্রুপ এর মালিকানা ছেড়ে দিলে নাভানা ফার্মার বর্তমান শেয়ারহোল্ডার -পরিচালকরা তা কিনে নেন। নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে কোম্পানিটি সাফল্যের সাথে পরিচালিত হচ্ছে। দক্ষ নেতৃত্বের কারণে গত দুই বছরে কোম্পানিটি অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে।

তিনি জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরে ইসলাম গ্রুপ নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের মালিকানা ছেড়ে দেওয়ার দুই মাস পর ভুল বুঝাবুঝি এড়াতে নাভানা গ্রুপের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। নাভানা গ্রুপের সাথে যে নাভানা ফার্মার কোনো সম্পর্ক নেই, তা ওই বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ঠভাবে উল্লেখ করা হয়। তাই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.