গাড়ির তেল খরচ কমানোর সবচেয়ে সহজ কয়টি উপায়

গাড়ি চালাতে সবার আগে দরকার জ্বালানি। জ্বালানি বা ফুয়েল ছাড়া গাড়ি চালানো অসম্ভব। কিন্তু এই জ্বালানিই আবার খরচের একটা বড় অংশ। ব্যক্তিগত কিংবা পেশাদার যে কারণেই আপনি গাড়ি চালান না কেন, গাড়ির তেলের খরচ যেন কিছুতেই কমাতে পারছেন না। অনেকে জ্বালানি তেলের খরচ বাঁচাতে নিম্নমানের তেল ব্যবহার করে থাকেন, তাতে আপনার তেলের খরচ সামান্য কমে; কিন্তু এতে গাড়ির ইঞ্জিনের বারোটা বেজে যায়।

তাই অনেকেই জ্বালানি খরচ নিয়ে সর্বদা চিন্তায় থাকেন। অনেকেই জ্বালানি খরচ কমাতে গাড়িকে সিএনজি করে ফেলেন। কিন্তু সিএনজি হোক, বা তেল- দরকারি জিনিসের মতো জ্বালানির দামও বাড়ছে। বাড়ছে গ্যাসের দাম! তাই গাড়ি ব্যবহারে আরো সতর্ক হতে হবে। এমন ভাবে গাড়িকে ব্যবহার করতে হবে যেন, গাড়ির কোন অসামঞ্জস্যতায় গাড়ির জ্বালানি অতিরিক্ত খরচ না হয়। সেজন্য মেনে চলতে হবে নিচের কয়েকটি সহজ উপায়!

১। কিছুটা ধীরে চলুন।

জীবনে সবারই তাড়াহুড়ো থাকে। সবাই চায় সবার আগে ছুটতে। কিন্তু সবার আগে ছুটতে গেলে কখনো কখনো পিছিয়েও পড়তে হয়। এই যেমন ধরুন আপনি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে, খালি রাস্তা পেয়ে ইচ্ছে মতো স্পিড তুলে গাড়ি চালাচ্ছেন। ওদিকে সর্বনাশ হচ্ছে আপনার ইঞ্জিনের আর জ্বালানির। ইঞ্জিনের উপর চাপ বেশি পড়ায় জ্বালানি খরচ হচ্ছে বেশি। তাই এত তাড়াহুড়ো না করে একটা স্পিড লিমিট ঠিক করে গাড়ি চালান। এতে করে আপনার গন্তব্যে পৌছাতে খুব একটা দেরি না হলেও কমে যাবে জ্বালানি খরচ। সুফলটা হয়ত একদিনে পাবেন না। এভাবে কয়েকদিন বা মাস খানেক চেষ্টা করে দেখুন, জ্বালানি খরচ কমবে নিশ্চিত।

২। টায়ার প্রেশার ঠিক রাখুন

আপনি জানেন কি আপনার টায়ার যে আপনার গাড়ির তেল খায়! আপনি যদি মনে করে একা ইঞ্জিনই তেল খায় তাহলে ভুল। আপনার গাড়ির টায়ারেরও তেল খাওয়ার ক্ষমতা আছে। আর এই ক্ষমতা গাড়ির টায়ার তখনি পায় যখন আপনার গাড়ির টায়ারের প্রেশার ঠিক থাকে না। ইনফ্ল্যাটেড টায়ার গাড়ির জ্বালানি খরচ বাড়ার একটি কারণ। ইনফ্ল্যাটেড টায়ার বা গাড়ির টায়ার প্রেশার কম থাকলে সেটি রাস্তায় স্মুথলি চলতে পারেনা, ফলে ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়ে। আর ইঞ্জিনের উপর চাপ পড়লেই সে গাড়ির জ্বালানি বেশি খরচ করে ফেলে। ফলে ইনফ্ল্যাটেড টায়ারের কারণে খরচ হচ্ছে অতিরিক্ত জ্বালানি। গাড়ির টায়ারের প্রেশার সবসময় ঠিক রাখুন। মাস শেষে দেখবেন, কম ফুয়েলেই গাড়ি চলেছে আগের চাইতে বেশি পথ। অর্থাৎ মাইলেজ পাবেন বেশি।

৩। এয়ার ফিল্টার চেক করুন

আপনার গাড়ির এয়ার ফিল্টার যদি পরিচ্ছন্ন না থাকে তাহলে আপনার গাড়ির জ্বালানি খরচ বাড়বে। কারণ অপরিচ্ছন্ন এয়ার ফিল্টারের কারণে ইঞ্জিনে বাতাস চলাচলে বাধা পায়। ফলে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা কমে যায়। আর এই কারণে ইঞ্জিন বেশি তেল বা জ্বালানি খরচ করে ফেলে। এয়ার ফিল্টার পরীক্ষা করা খুবই সহজ কাজ। গাড়ির ইউজার মেনুয়াল দেখে ফিল্টার খুলে সূর্যের নিচে ধরুন। তারপর এর মধ্যে দিয়ে সূর্যের দিকে তাকান। যদি ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি আপনার চোখে এসে পড়ে তাহলে বুঝবেন ফিল্টার পরিষ্কার আছে, আর যদি সূর্যরশ্মি আসতে বাধা পায় বা না আসে তাহলে বুঝবেন তা পরিষ্কার করতে হবে। এয়ার ফিল্টার পরিস্কার রাখুন, জ্বালানি খরচ ও ফুয়েলের অপচয় থামান।

৪। সতর্কতা এবং যত্নের সাথে গাড়ির গতি বাড়ান

অনেকেই গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়েই- ভুউউউউম্মম্মম্ম! মানে গতি নিয়ে খেলতে ভালবাসেন। কিন্তু পকেটের টাকা যদি বলে জ্বালানি খরচ টা একটু কমাতে হবে, তাহলে এই অভ্যাস পরিহার করুন। আপনি যদি নিত্যদিন গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন এবং এটি যদি আপনার কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে একটু হিসেবি হয়ে উঠুন। গাড়ির ট্রান্সমিশন গিয়ার স্মুথ হবার জন্য, গাড়ির গতি সতর্কতার সাথে বাড়ান। আর রাস্তায় কোথায় কোথায় কখন ব্রেক করতে হবে তার দিকে একটু বাড়তি নজর রাখুন। হঠাৎ করে ব্রেক করতে গেলে আবার জ্বালানি খরচ হয়ে যায় বেশি! তাই গতি তুলুন সতর্কতার সাথে ব্রেক ও করুন সহজে। এতে করে বাঁচবে জ্বালানি, বাঁচতে পারে প্রাণ!

৫। জ্যামে পড়লে হুটহাট ব্রেক আর স্পিড আপ করবেন না।

দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকলে খেয়াল করে দেখবেন, ট্রাকগুলো যত কম গতিতে হোক না কেন, চলমান থাকার চেষ্টা করে। জ্যাম ছুটলে হঠাত গাতি বাড়ায় না, আবার জ্যাম লাগলে হুট করে ব্রেকও করে না। এটা কেন করে জানেন? কারণ এতে করে ইঞ্জিনের উপর চাপ কম পড়ে এবং জ্বালানি খরচ কম হয়! আপনি আপনার গাড়ির জ্বালানি খরচ কমাতেও এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করে দেখতে পারেন।

৬। প্রকৃতির স্বাদ নিন

সবসময় গাড়ির মধ্যে এসি চালিয়ে না রেখে, মাঝে মাঝে গাড়ির জানালা খুলে দিন। অফ রোড বা লং রোডে ড্রাইভ করার সময় গাড়ির জানালা খুলে একটু প্রকৃতির স্বাদ নিন। এতে করে গাড়ির জ্বালানি ব্যয় কমে যাবে। মন থাকবে প্রফুল্ল।

৭। পুরোনো চাকা স্টকে রাখুন

আপনি হয়ত গাড়ি নতুন করতে বা হ্যান্ডেলিং ঠিক রাখতে গাড়ির চাকা বা টায়ার বদলাচ্ছেন। কিন্তু নতুন চাকার আয়তন কিন্তু পুরানো চাকা থেকে বেশি থাকে কিছুটা হলেও। যা চোখের আন্দাজে টের পাওয়া যায় না। আবার এই শক্ত নতুন চাকাকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্যও ইঞ্জিনকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে হয়। ফলে টায়ার বা চাকা বদলালে জ্বালানি খরচ বাড়ে যা হয়ত খালি চোখে দেখা যায় না। আপনি গাড়ির চাকা বদলান, তাতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু পুরোনো চাকাটি স্টকে রাখুন। দীর্ঘ পথে বা প্রয়োজনে সেটি ব্যবহার করে গাড়ির জ্বালানি খরচ কিছুটা কমাতে পারেন।

৮। গাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন

গাড়ি পরিস্কার পরিছন্ন রাখলে গাড়ির জ্বালানি খরচ কমে যায় এমনটি আগে শোনেননি, তাইনা? শুনুন, গাড়ি যত পরিষ্কার পরিছন্ন থাকবে, গাড়ির ওজনও থাকবে তত  অপটিমাইজড। গাড়ির তেল খরচ বেশি হবার একটা কারণ গাড়ির অতিরিক্ত ওজন।  মাঝে মাঝে অনেকেই গাড়িতে অতিরিক্ত পার্টস ব্যবহার করি বা অপরিষ্কার রাখি। এতে গাড়ির ওজন বাড়ে, বাড়ে জ্বালানি ব্যয়! তাই গাড়ির জ্বালানি খরচ কম রাখতে গাড়ি ওজন যতটা কম রাখা যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। আর গাড়িকে সবসময় পরিস্কার রাখুন।

৯। ভেইকেল ট্র্যাকার ব্যবহার করুন

বর্তমানে গাড়ির তেলচুরি খুবই কমন একটা বিষয়। গাড়ির তেল নিয়ে এত দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় যে, মাঝে মাঝে গাড়ির উপরই বিরক্তি চলে আসে, এইসব বিরক্তি থেকে মুক্তি দিতে এবং গাড়ির তেল চুরি ঠেকাতে গাড়িতে ব্যবহার করতে পারেন ভেইকেল ট্র্যাকিং সার্ভিস। এতে করে আপনি আপনার গাড়ির সমস্ত কিছু মনিটর করতে পারবেন মোবাইলেই। এমনকি আপনি যদি গাড়িতে নাও থাকেন তাও গাড়ি থাকবে আপনার নজরদারিতে। বা আপনি যখন গাড়িতে থাকবেন, ট্র্যাকিং সার্ভিসের মাধ্যমে ম্যাপ দেখে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য সবচাইতে সহজ রুটও ঠিক করে নিতে পারবেন। ফলে বাড়তি তেল খরচ বেঁচে যাবে অনেকাংশে।

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.