পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাবে বিজিএমইএ’র সমর্থন

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কোনো প্রশ্ন ছাড়া নামমাত্র কর দিয়ে পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার যে সুযোগ দিয়েছেন তাকে সমর্থন জানিয়েছে পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।

সোমবার (১৩ জুন) বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, দেশের এই সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানো দরকার। এজন্য সরকারের যে কোনো পদক্ষেপকে স্বাগত জানাবে বিজিএমইএ। কম কর হার, কিংবা সাধারণ ক্ষমায়ও আপত্তি নেই রপ্তানিকারকদের।

তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সময় অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। বর্তমান বাস্তবতায় সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাকে আমরা মেনে নেবো।’

জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) অর্থমন্ত্রী ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন তাতে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থিত কোনো সম্পদের ওপর কর পরিশোধ করা হলে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কেউ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলবে না। এক্ষেত্রে বিদেশে অর্জিত স্থাবর সম্পত্তি দেশে না আনলে এর ওপর ১৫ শতাংশ, অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ এবং নগদ অর্থের ওপর ৭ শতাংশ কর বসানোর সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বাজেট ঘোষণার পর থেকে যদিও ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, ডিসিসিআইসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন এই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি, সানেমসহ অধিকাংশ অর্থনীতিবিদও অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের সমালোচনা করে এটাকে ‘অনৈতিক’ বলছেন। এর ফলে সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন এবং দেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

এ অবস্থায় দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ বিষয়টিতে সমর্থন দিল।

একই দিনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেটা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। বাজেটে এই সংক্রান্ত যে প্রস্তাবনা রয়েছে সেটা অবশ্যই বাদ দিতে হবে। এবং এটা নিয়ে কোন ধরনের কম্পমাইজ করার সুযোগ নেই। আমরা দেখছি অনেকেই এটাকে নানাভাবে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা কোনভাবেই জাস্টিফেবল না।

তিনি আরো বলেন, আমদানি-রফতানির আড়ালে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমেই এই টাকা পাচার হয়ে থাকে। এটা অনেক বড় একটা চক্র। এই চক্রে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি জড়িত। সেইসাথে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরাও এর সাথে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বাজেটে সেই বিষয়টি উল্লেখ থাকা দরকার ছিল। কেননা এদেরকে পুরস্কৃত করার কোন সুযোগ নেই। বরং এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই টাকা পাচারের পরিমাণ কমে আসবে।

মার্কিন গবেষণা সংস্থা জিএফআইর হিসাবে, টাকা পাচারে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। বছরে এখান থেকে গড়ে পাচার হয় প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা। সংস্থাটির মতে, পাচারের ৮০ ভাগই হয় বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে।

অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানির আড়ালে ওভার ইনভয়েসিং-আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়। দেশের আমদানি-রপ্তানির ৮০ ভাগই করে থাকেন পোশাক শিল্পমালিকরা। এই পাচার বন্ধে বিজিএমইএ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘অর্থ পাচার শুধু ওভার ইনভয়েসিং-আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে হয় না। বাণিজ্য ছাড়াও অনেক উপায়ে অর্থ পাচার করা যায়। রপ্তানিকারকরা নিয়ম মেনে ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করেন। অর্থ পাচার বন্ধে সরকার যে ব্যবস্থা নেবে বিজিএমইএ তাকে সমর্থন করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.