রপ্তানি খাতের উৎসে কর বেড়ে দ্বিগুণ

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পোশাকখাতসহ রপ্তানি খাতের উৎসে কর হার দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তবে প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য এবার সুখবর এসেছে। পোশাক খাতের মতো সব রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানের করহার ১২ শতাংশ এবং সবুজ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। বস্ত্র খাতের সব শিল্পের ১৫ শতাংশ করহারের মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। এর মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, কর রাজস্ব আহরণের প্রধানতম খাত হচ্ছে উৎস কর সংগ্রহ। আমাদের দেশের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। অতএব, রাজস্ব নীতি প্রণয়নে উৎসে কর হার যৌক্তিকীকরণের গুরুত্ব সর্বাধিক। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যমান কর্পোরেট কর হার বিবেচনায় ব্যাংক সুদের উৎসে করহার কোম্পানি করদাতার জন্য ১০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ এবং রপ্তানীকৃত পণ্যদ্রব্য এর ওপর উৎসে করহার ০.৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনিবাসী করদাতার নিকট ব্যান্ডউইথ বাবদ প্রেরিত অর্থের ওপর উৎসে করের হার ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। অবৈধ পন্থায় বিদেশে অনিবাসীর বিল পরিশোধ নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে কতিপয় সেবা ছাড়া অন্যান্য সব বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে অনিবাসী হতে ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, তৈরিপোশাকের বিদ্যমান প্রযোজ্য কর হার সাধারণ ফ্যাক্টরির জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রিন ফ্যাক্টরির জন্য ১০ শতাংশের বিধান প্রচলিত রয়েছে। রপ্তানি খাতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণকে উৎসাহ প্রদান ও সব ধরনের রপ্তানি শিল্পকে সমতাভিত্তিক সুবিধা প্রদানের নিমিত্ত গার্মেন্টসের ন্যায় অন্যান্য পণ্য বা সেবা রপ্তানি খাতকে হ্রাসকৃত কর হার সুবিধা তথা সাধারণ শিল্পের জন্য ১২ শতাংশ এবং গ্রিন শিল্পের জন্য ১০ শতাংশ কর হারর প্রস্তাব করছি।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেটে বড় ব্যয়ের বাজেট বাস্তবায়নে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যেখানে বাজেটে অনুদান ছাড়া ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। যা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের আয়ের খাতগুলো থেকে কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.