৩ পুলিশ সদস্যকে মারধর: ৪৫০ জনের নামে মামলা

রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী এক নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও তিন পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে তিন জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাড়ে ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ জুন) রাতে শ্যামপুর থানায় আহত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. আলী হোসেন নিজেই বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন। হামলায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আলী হোসেন, শ্যামপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) উৎপল দত্ত অপু ও কনস্টেবল সিরাজুল ইসলাম আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে এসআই উৎপল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অপর দুই পুলিশ সদস্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

মামলায় নাম উল্লেখ করা আসামিরা হলেন- ঘটনার পর আটক মোটরসাইকেল চালক বার্তা বিচিত্রা পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহাগ-উল ইসলাম রনি, তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান ভূঁইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভূঁইয়া। পরে তাদের ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

শ্যামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মফিজুল আলম জানান, জুরাইন রেলগেট এলাকায় রাস্তার উল্টোদিক দিয়ে আসা মোটরসাইকেল আরোহীকে আটকে কাগজপত্র দেখতে চাওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধারে আসা আরও দুই পুলিশ সদস্যকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা (মামলা নং-১১) করা হয়েছে। আটক তিনজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ (৮ জুন) আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এলাকাবাসী বলছে, মোটরসাইকেল থামানো নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে নিশাত ভুইয়ার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন। এক পর্যায় নিশাতকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে মারধর করা হয়। সেখানে মোটরসাইকেল আরোহী ওই নারীর চিৎকারে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করে। সার্জেন্ট আলী হোসেনের বিরুদ্ধে যানবাহন থামিয়ে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করে এলাকাবাসী বলছে, অনেক দিনের ক্ষোভের কারণে লোকজন এই হামলায় অংশ নিয়েছে।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, উল্টো পথে চালানো মোটরসাইকেল আটকে কাগজপত্র দেখতে চান সার্জেন্ট আলী হোসেন। এ ঘটনায় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে লোকজন জড়ো করে পুলিশ বক্সে হামলা করা হয়। এসআই উৎপল দত্তের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আহত আলী হোসেনের শরীরে ২১টি সেলাই দিতে হয়েছে।

পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখারুল আলম বলেন, গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় উল্টো পথে আসছিল একটি মোটরসাইকেল। মোটরসাইকেলে এক নারীসহ দুজন আরোহী ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেলের চালক দুর্ব্যবহার শুরু করেন। তাঁরা পোশাক পরা অবস্থায় অন ডিউটিতে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরে দুজনকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে ওই নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখন আশপাশে থাকা লোকজন নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ তুলে সার্জেন্টকে মারধর করে এবং পুলিশ বক্স গুঁড়িয়ে দেয়। অভিযুক্ত মোটরসাইকেলচালক সার্জেন্টের বুকের ওপর পা তুলে চেপে বসে। এ সময় ঘটনাস্থলে আসা জনতার মধ্যে থেকে একজন সার্জেন্টের হাতে ছুরিকাঘাত করে।

তিনি আরো বলেন, সার্জেন্টকে উদ্ধারে আসা পুলিশ সদস্যদের মারধর ও ধাওয়া করা হয়। পরে শ্যামপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়ে আহত তিন পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে মোটরসাইকেলচালক রনি বার্তা বিচিত্রা নামক পত্রিকার সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। তাঁর সঙ্গে আছেন স্ত্রী নিশাত ভুইয়া ও শ্যালক ইয়াসির আরাফাত ভুইয়া। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদেরও অপরাধ আছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।

আটক নিশাত ভুইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, মোটরসাইকেলের কাগজ দেখানোর পরও মামলা দিয়ে আটক করতে চায়। এ নিয়ে কথা বলতে গেলে সার্জেন্ট আলী হোসেন গায়ে হাত তোলেন।  বিনা কারণে বক্সে এনে আটকে রাখে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে এলাকার বাসিন্দারা বলেন, রেলগেট এলাকায় রিকশা, রিকশাভ্যান, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়ি, ছোট পিকআপ, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন অকারণে আটকে হয়রানি করেন সার্জেন্ট আলী হোসেন। এ কারণে অনেকে তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। ওই নারীকে লাঞ্ছিত করার খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকে জড়ো হয়ে সার্জেন্ট আলীর ওপর ক্ষোভ ঝাড়ে। কিছু মানুষ ছিল ওই নারীর আত্মীয়-স্বজন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.