বিএসইসি, বিএপিএলসি ও সিএমএসএফ’র সংলাপ শেষে যা জানা গেল

২২ হাজার কোটি টাকা আসার কথা, সেখানে কেন ৭শ-৮শ কোটি টাকা আসল! আমাদের কাছে তো দেড়-দুই বছরের স্টেইটমেন্ট আছে, টাকাগুলো গেল কই? -প্রশ্ন তুললেন পুজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

ফরেন রিজার্ভ নিয়ে যারা ভয় পাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এ মাসে দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আর আমাদের এ বছরের ডেবট (ঋণ) হচ্ছে দুই বিলিয়ন ডলার, সামনের বছর তা চার বিলিয়ন ডলার যাবে। যে দেশটা এক মাসের রেমিট্যান্স দিয়ে এক বছরের ঋণ পরিশোধ করতে পারে সে দেশটা কীভাবে ডিফল্ট (দেউলিয়া) হবে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৬ মে রাতে ” বিএসইসি-বিএপিএলসি- সিএমএসএফ ত্রিপক্ষীয় সংলাপ” শীর্ষক এক অংশীদারিত্ব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব জানান। অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাজারকে দৃঢ় ও মজবুত করতে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের উদ্যোগে আয়োজিত হয় ত্রিপক্ষীয় সংলাপ।

এতে সভাপতিত্ব করেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) সাবেক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে আসন অলঙ্কৃত করেন বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাব্লিক লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) এর প্রেসিডেন্ট এম. আনিস উদ দৌলা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কমিশনার বাজার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নতুন নতুন কোম্পানিগুলোকে বাজারে “লিস্টেড” করার আহবান জানান। এ সময় বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে বিএসইসি তার সর্বোচ্চ দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান আছেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে বিনিয়োগ করেন নাই। তাই তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে “ক্যাম্পেইন” করতে হবে। এমটা করা হলে বাজার মূলধন বাড়বে ও বাজার অস্থিরতা কাটবে তিনি মনে করেন।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জানা গেছে, করোনকালে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল প্রায় থার্টি (৩০) বিলিয়নের আশেপাশে। সেসসয় মিল-কারখানা বন্ধ ছিল, জাহাজ চলত না, সাপ্লাই-চেইন ব্যহত হত। তারপরেও রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

এদিকে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাব্লিক লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি) এর প্রেসিডেন্ট এম. আনিস উদ দৌলা বিনিয়োগকারী ও ইস্যুয়ারদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে মতামত দেন। এ সময় তিনি ‘কেন বাজারে বড় বড় কোম্পানিগুলো আসছে না’ সে বিষয়ে বিএসইসিকে নিরপেক্ষ তদন্ত করার আহবান জানান। সেইসাথে বিদেশি বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলো কেন সরে যাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা করার কথা বলেন তিনি।

তিনি মনে করেন, সকল সদস্যরা ফান্ডটিকে সহায়তা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য সমাপ্তি করেন।

নিজেদের যে সীমাবদ্ধতা র‍য়েছে তা বিএসইসির চেয়ারম্যান নিজেই অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি আরও বলেন, দুই বছরে আইসিবি সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা লোকসান করে এবছর ৪শ-সাড়ে ৪শ কোটি টাকার প্রফিট করেছে। তবে আইসিবির আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তবে তিনি আইসিবির উপর চাপ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথাও বলেছেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে বাজার ঠিকঠাক হয়ে যাবে।

সর্বশেষ বক্তৃতায় সিএমএসএফ-এর সাবেক প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ও চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডকে বিএসইসির এক “ইনোভেটিভ আইডিয়া” উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ফান্ডটি যুক্ত রয়েছে আইসিবি, সিডিবিএল, সিসিবিএল, বিআইসিএম, সিএসই, ডিএসই, এসইসি। এখানে যেহেতু এ সমস্ত প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে সেহেতু আপনারা এতে আস্থা রাখতে পারেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ার উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, যারা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়াতে না জেনে, না বুঝে একটা দেশের মানুষকে ভয় দেখিয়ে তাদের নরমাল এ্যক্টিভিটিতে বাধা দেয় তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এদেশের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। তাদের কথায় ভয় না পাওয়ার জন্য তিনি তাদেরকে সাহসও দেন।

এর আগে ডিসকাশন প্যানেল হয়। একে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। প্রথম অংশে নির্বাচিত চারজন কোম্পানির প্রতিনিধিদের ২ মিনিট করে সময় দেয়া হয়, সিএমএসএফ সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতা বা মতামত ব্যক্ত করার জন্য যেখানে তারা আশা করছেন ফান্ডটি বিনিয়োগকারীদের মাঝে ইতিবাচকতা আনবে ও শেয়ারহোল্ডারদেরকে সুবিধা দিবে।

পরবর্তী অংশে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্যানেলটি পরিচালনা করেন বিএসইসির প্রাক্তন কমিশনার এবং শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান আরিফ খান। উত্তরদাতা হিসেবে সেসময় উপস্থিত ছিলেন মোঃ ইউনুসুর রহমান, চেয়ারম্যান, ডিএসই, আসিফ ইব্রাহিম, চেয়ারম্যান, সিএসই, কাজী সানাউল হক, চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক লিমিটেড, এবং জনাব রিয়াদ মাহমুদ, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট , বিএপিএলসি। তাদের প্রত্যেককে দুটি করে প্রশ্ন করা হয়।

এছাড়া মূল বক্তব্যের পূর্বে মোঃ মনোয়ার হোসেন এফসিএ, চিফ অফ অপারেশন (সিওও), সিএমএসএফ এর একটি বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন।

উল্লেখ্য যে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নের জন্য তিন বছরের অধিক সময়ের জন্য অদাবিকৃত/ অ-বন্টনকৃত নগদ বা স্টক লভ্যাংশের উপর ভিত্তি করে সিএমএসএফ গঠন করে।

 

অর্থসূচক/এইচডি/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.