পিকে হালদারের গ্রেপ্তারে বেড়েছে শেয়ারের দাম!

পুঁজিবাজারে বড় পতন হয়েছে। এমন দিনে দর বেড়েছে ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। তা-ও সার্কিটব্রেকারের প্রায় সর্বোচ্চ সীমায়। অথচ কোম্পানি দুটির মৌলভিত্তি খুবই দুর্বল। ব্যাপক লুটপাটের কারণে তহবিল বলতে কিছু নেই। পাচ্ছে না কোনো আমানত। বন্ধ আছে লিজ অর্থায়নসহ আয়ের সব পথ। এমন মন্দ দুই কোম্পানির শেয়ারের দামে বড় উল্লম্ফনের ঘটনা তাই চমকে দিয়েছে সবাইকে।

আলোচিত কোম্পানি দুটি হচ্ছে-ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ও এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

আজ সোমবার (১৬ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। শেয়ারটির দাম ৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে ৬ টাকা হয়েছে।

অন্যদিকে এএফএএস ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৬০ পয়সায় উঠেছে।

দেশের পুঁজিবাজারে বিদ্যমান সার্কিটব্রেকার ব্যবস্থায় একদিনে এই ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এমন দিনে কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম এতটা বেড়েছে, যেদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৯১ শতাংশ কোম্পানি শেয়ারের দর হারিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্যতম বড় জালিয়াত প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) গ্রেপ্তারের প্রভাব পড়েছে আলোচিত ২ কোম্পানির শেয়ারে। পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে কোম্পানি দুটি থেকে  বেনামি ঋণের মাধ্যমে লুট করে নেওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হবে এমন আশাবাদে বেড়েছে কোম্পানি দুটির শেয়ারের দাম। এর সাথে থাকতে পারে কিছু বড় বিনিয়োগকারীর কারসাজি, যারা বেশি দামে কোম্পানি দুটির শেয়ার কিনে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছেন।

পিকে হালদারের লুটতরাজের অন্যতম বড় শিকার দেশের পুঁজিবাজার। এই বাজারে তালিকাভুক্ত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লুট করে সেগুলোকে অন্ত:সারশূন্য করে দিয়েছেন। কোম্পানিগুলো হচ্ছে-পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে কোম্পানিগুলো থেকে নিয়ে যাওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার হতে পারে, তাতে জীবন ফিরে পেতে পারে কোম্পানিগুলো-এমন আশাবাদ আজ ২টি কোম্পানির দাম বেড়েছে।

আলোচিত কোম্পানি চারটির মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও এএফএএস ফাইন্যান্সের শেয়ারের দাম বাড়লেও বিআইএফসির দাম বাড়েনি; উল্টো কমেছে। এই কোম্পানিটিতে পিকে হালদারের পাশাপাশি এর অন্যতম উদ্যোক্তা মেজর আব্দুল মান্নানও (অব) বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে কোম্পানিটিতে এখনো মান্নানের একক নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তাই পিকের পাচার করা টাকা ফিরে এলেও কোম্পানির স্বাস্থ্য ভাল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমন ভাবনায় বিনিয়োগকারীরা এই শেয়ারে তেমন আগ্রহ দেখাননি। তবে শেয়ারের দাম না বাড়লেও লেনদেন বেড়েছে কয়েকগুণ। আগের কার্যদিবসে যেখানে কোম্পানিটির লেনদেনকৃত শেয়ারের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারেরও কম, সেখানে আজ ৬০ হাজারের বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।

অন্যদিকে আর্থিক সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিংকে অবসায়নের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.