মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ

এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। লেনদেনের পাশাপাশি কমেছে সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লেনদেন হয়েছে ৬৮ হাজার ৯৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ৭৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৫ হাজার ২৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা মহামারির মধ্যে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার অনেক বেশি বেড়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সাধারণ ব্যাংকিংয়ের চেয়ে মোবাইলে ব্যাংকিংয়ের সহজলভ্যতা মানুষকে আকৃষ্ট করছে। এতে করোনাকারীন সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি লেনদেনও বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কমেছে। এছাড়া, মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষ খুব চাপে আছে। এর ফলে তারা নিজেদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় তারা খুব বেশি অর্থ বাড়িতে পাঠাতে পারছেন না।

জানা গেছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা সহজ হওয়ায় এর জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজেই যে কেউ মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। একইসঙ্গে টাকা লেনদেন করতে পারেন বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে। দেশের মধ্যে অসংখ্য ব্যাংক এজেন্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় লেনদেনের জন্য গ্রাহকদের ব্যাংকের শাখায় যেতে হয় না। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের সময় লাঘবের সঙ্গে যাতায়াত খরচও বাঁচে।

বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে। ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ও একই ধরনের সেবা দিচ্ছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এই সেবা উল্লিখিত হিসাবে এখনো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকরা ৬৮ হাজার ৯৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুলাইয়ে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল দুই হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। ওই মাসে মোট লেনদেন হয় ৭৩ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে আরো দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৪০ লাখ। যা ফেব্রুয়ারি শেষে বেড়ে হয়েছে ১১ কোটি ৬১ লাখ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের সংখ্যা ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৬৮ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৬১ জনে।

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা এখন আর শুধু টাকা পাঠানোতেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর মাধ্যমে দৈনন্দিন কেনাকাটা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ, স্কুল-কলেজের বেতন, বীমার প্রিমিয়াম এবং মোবাইলে রিচার্জসহ নানা ধরনের সেবা মিলছে।

ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে জমা এবং উত্তোলন দুটোই কমেছে। এসময় জমা পড়েছে (ক্যাশ ইন) ২০ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। যা আগের মাস জানুয়ারিতে ছিল ২২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা; উত্তোলন করা হয়েছে (ক্যাশ আউট) ১৮ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল ১৯ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে ১৯ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ৯৯ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার ৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.