ঋণের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক নয়: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

করোনা মহামারী মোকাবিলায় সারাবিশ্বে ঋণের বোঝা বেড়েছে। উন্নত দেশগুলো মানুষকে সরাসরি নগদ সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে তেমনটা হয়নি, তা সত্ত্বেও দেশে সরকারের ঋণ গত ১০ বছরে অব্যাহতভাবে বেড়েছে। তবে সেই ঋণ এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি বলে মনে করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। কিন্তু তার মতে, আগামী ২০২৪-২৫ সাল থেকে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে স্বস্তির ভাব দূর হতে শুরু করবে।

সোমবার (০৯ মে) সকাল ১১ টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল আলাপচারিতায় এমন কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বাংলাদেশের সরকারি দায়-দেনা শীর্ষক এই আলাপচারিতায় দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশ সরকারের সামগ্রিক ঋণ নিয়ে তার মত প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন সরকার যে ঋণের হিসাব দেয় সেখানে সবকিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। তার হিসাবে সরকারের সামগ্রিক ঋণ এখন জিডিপির ৪৪ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশ এখনই ঋণ পরিশোধের চাপে পড়বে না।

আবার অনেকে শ্রীলংকার সঙ্গে বাংলাদেশের যে তুলনা করেন, তাও তিনি অপ্রাসঙ্গিক বলেই মনে করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। ফলে সেভাবেই বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন, যখন ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এই বাস্তবতা ঋণ পরিশোধযোগ্যতার জন্য সুসংবাদ নয় বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে আলোকপাত করেন। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ ব্যাপক চাপে আছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদ হার বৃদ্ধির সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

তবে নীতি সুদ হার বৃদ্ধির বিপক্ষে যুক্তি হলো এতে বিনিয়োগ কমে যায়। মানুষের হাতে ব্যয়যোগ্য টাকার পরিমাণ কমে যায়।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সু্দ হার বেঁধে দেওয়ার কারণে দেশে গত তিন বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা নয়। এখনো জিডিপির ২৩ শতাংশের আশপাশেই রয়েছে।

তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি করতে হবে এবং এই মুহূর্তে মানুষকে মূল্যস্ফীতির হাত থেকে রেহাই দিতে নীতি সুদ হার বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরো যুক্ত ছিলেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের সরকারি ঋণের পাশাপাশি বেসরকারি ঋণও গত ১০ বছরে অনেকটা বেড়েছে। বেসরকারি খাতে যারা নমনীয় লাইবর হারে ঋণ নিয়েছেন, তাদের সুদহার গত কয়েক বছরে অনেকটা বেড়েছে। এই বিষয়টিও মাথায় রাখা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এই ঋণ খেলাপ হলে দেশের ঋণমানে তার প্রভাব পড়বে।

অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদকর্মী দের পাশাপাশি গবেষকেরাও যুক্ত ছিলেন।

অর্থসূচক/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.