সেই টিটিইকে-ই ডেকে পাঠানো হয়েছে

বিনা-টিকেটের যাত্রীকে জরিমানা

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা-টিকেটে ভ্রমণের দায়ে তিন যাত্রীকে জরিমানাকারী টিটিই শফিকুল ইসলামকে ডেকে পাঠিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) তাকে রোববার তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে কথিত অসদাচরণের ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই ঘটনায় গত ৬ এপ্রিল তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এ ছাড়া এ ঘটনা তদন্তে পাকশীর সরকারি পরিবহণ কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, বিনা-টিকেটের যাত্রীরা তার আত্মীয় নন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন টিটিইকে বরখাস্তের কারণ হিসেবে এক যাত্রীর হাতে লেখা একটি অভিযোগপত্রের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ৫ মে ঘটনার দিন ইমরুল কায়েস নামে এক যাত্রী অভিযোগটি দিয়েছেন। এরপর টিটিই শফিকুল ইসলামকে ওই দিনই বরখাস্ত করা হয়।

ডিসিও নাসির উদ্দিন আরও বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তিনি এর আগেও যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। ফলে যাত্রীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে।

এর প্রেক্ষিতেই তাকে রোববার স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৫ মে রাতে খুলনা থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে বিনা টিকিটে তিন যাত্রী ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তারা ট্রেনের এসি কামরায় বসেছিলেন। তাদের কাছে টিকেট চাইলে তারা কোনো টিকেট দেখাতে পারেননি। টিটিই তাদেরকে টিকেট কাটার কথা বললে, তারা নিজেদেরকে রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে টিটিইর সাথে তর্কে লিপ্ত হন। তবে শেষ পর্যন্ত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকা ভাড়া নিয়ে এসি কামরা থেকে শোভন কামরায় পাঠান। ওই তিন যাত্রী শোভন কামরাতেই ঢাকা পৌঁছান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইলফোনে টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়।

বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে ওই সময় সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানানো হয়, একজন যাত্রীর কাছ থেকে ওই টিটিইর বিরুদ্ধে অসদাচরণের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার প্রেক্ষিতে ওই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে ওই যাত্রী দাবি করেন, তিনি ৫ মে দিবাগত রাত ২টা ১৫ মিনিটে কাউন্টারে টিকিট না পেয়ে ট্রেনে ওঠেন। এরপর টিটিই এসে তাদের কাছে টিকিট চান। তিনি টিকিট পাননি বলে জানান। পরে তিনি টিকিট দিতে বললে টিটিই তিনজনের ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। ৩০০ টাকার টিকিট ৫০০ কেন জানতে চাইলে তিনি ৩ হাজার ৬০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিতে হবে জানান। এত টাকা দেওয়া সম্ভব না বলাতে টিটিই খেপে যান। তিনি বকাবকি করেন। ওই যাত্রীর দাবি, টিটিই মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনি তার শাস্তি দাবি করেন।

গণমাধ্যমের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কারও সঙ্গে অশোভন আচরণ করেননি। শুধু তিনি তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি বলেন, আমাকে ব্যাখ্যার জন্য ডাকা হয়েছে। ব্যাখ্যা দিতে আমি প্রস্তুত। সেদিন যা যা ঘটেছে, আমি সেটাই বলব। স্যারেরা যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবেন।

এদিকে আলোচিত ঘটনাটি টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা টিআইবি ওই ঘটনাকে ন্যাক্কারজক বলে অভিহিত করেছে। সংস্থাটি ওই ঘটনার জন্য রেলমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.