নগদ টাকার চাহিদা বাড়ায় কলমানিতে লেনদেন বেড়েছে

 

ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। এর ফলে অনেক ব্যাংক নগদ টাকার সংকটেও পড়েছে। সংকট মেটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এতে কলমানিতে গত বুধবার রেকর্ড লেনদেন হয়েছে। আর গতকাল বৃহষ্পতিবার লেনদেন কিছুটা কমলেও সুদের হার আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল।

এছাড়া, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও টাকা ধার বেড়েছে। এ জন্য ঈদের আগে টাকা ধার দিতে বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর সব ক্ষেত্রে সুদহার এখন আগের চেয়ে বাড়তি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ডলার কেনার কারণে বড় অঙ্কের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যাচ্ছে। আবার ঈদের আগে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে বোনাস দিতে হচ্ছে। আবার মাস শেষ হওয়ার আগেই অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন বুঝিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি গ্রাহকেরা ঈদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ছুটছেন। এ জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। সব মিলিয়ে নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে সংকট তৈরি হয়েছে।

সংকটের সময় এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে, আবার ব্যাংক থেকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাময়িকভাবে টাকা ধার নেয়। সাধারণত এক রাতের জন্য এই ধার নেয়া হয়। এই ধার দেয়া-নেয়া কার্যক্রম যে ব্যবস্থায় সম্পন্ন হয় তা আন্তব্যাংক কলমানি বাজার নামে পরিচিত। নগদ টাকার ঘাটতি থাকায় আন্তব্যাংক কলমানি বাজার থেকে নিয়মিত ধার করছে ব্যাংকগুলো।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) এক দিনের জন্য কলমানি মার্কেট থেকে ৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ধার দেয়া-নেয়া করেছে ব্যাংকগুলো। এই ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস বৃহষ্পতিবার (২৮ এপ্রিল) কলমানি মার্কেট থেকে এক দিনের লেনদেন কম হলেও সুদের হার কিছুটা বাড়তি ছিল। এদিন ৪৩০ কোটি টাকা ধার দেয়া-নেয়া করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এদিন ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার আগের দিনের মতো ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থাকলেও সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

বৃহষ্পতিবার ব্যাংকগুলো সবচেয়ে বেশি ধার করে সাত দিনের জন্য। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ৪ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো। আর ৯ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদে ধার করে ১৪০ কোটি টাকা। ৭সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে ১০ দিনের জন্য ধার করে এক হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ৬ দশমিক ৭৫শতাংশ সুদে ১১ দিনের জন্য ১৭৯ কোটি টাকা, ১২ দিনের জন্য ৯ শতাংশ সুদে ৪৮৫ কোটি টাকা, ৫ শতাংশ সুদে ১৩ দিনের জন্য ১০০ কোটি টাকা এবং ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ১৪ দিনের জন্য ১২৫ কোটি টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো।

কলমানির বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত তারল্য সহায়তা পেয়েছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে রেপোর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে এবং স্পেশাল রেপোর মাধ্যমে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে তারল্য সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর হাতে নগদ টাকা কমে যাচ্ছে। গত জানুয়ারিতে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, গত ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। মার্চে আরও কমেছে। তবে এত টাকা থাকার পরও ব্যাংকগুলো ধার করছে, কারণ ব্যাংকগুলোর কাছে নগদ টাকা আছে খুবই কম। উদ্বৃত্ত তারল্যের সিংহভাগ ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছে। কারণ, পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে এখন ৭ শতাংশ সুদ দিচ্ছে সরকার। আর ব্যাংকগুলোর হাতে গত জানুয়ারিতে নগদ অর্থ ছিল ২৯ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা, গত ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ২৬ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এই টাকা দিয়ে দৈনন্দিন কার্যক্রম মেটানো কঠিন, এ জন্য ব্যাংকগুলো টাকা ধার করছে। আবার যাদের বিল-বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তারা ঋণ না দিয়ে ধারের ব্যবসা করছে। কারণ, এতে কোনো ঝুঁকি নেই।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.