‘তরুণদের মাঝে মেয়েরাও ঝুকছে ধূমপানের দিকে’

“তরুণদের তামাক ব্যাবহার থেকে বিরত রাখার বিষয়ে বিশেষ যত্নশীল হওয়া দরকার। তরুণদের মাঝে আমাদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েরাও ধীরে ধীরে ধূমপানের দিকে ঝুঁকে পরছে। সেদিকেও আমাদের মনোযোগী হতে হবে। কারণ আমাদের তরুণ জনশক্তিই দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে সাফল্যের প্রধান্তম চালিকা শক্তি”

আজ (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে উন্নয়ন সমন্ব্যের উদ্যোগে আয়োজিত “তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ: আগামীর পথনকশা” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ড. আতিউর রহমান।

তিনি বলেন, করোনাকালে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, যারা ধূমপান করেন তাদের করোনায় মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। করোনায় আক্রান্ত সবার মৃত্যু হয়নি, কিন্তু আক্রান্ত যারা ধূমপায়ী ছিলেন তাদের বেশিরভাগেরই পরিণতি খারাপের দিকে গিয়েছে। এই তথ্যগুলো সকল মানুষের কাছে বিশেষ করে নীতি-নির্ধারকদের কাছে বেশি বেশি করে পৌছাতে হবে।

তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় দ্রুত বাড়ছে। ফলে সামান্য দাম বাড়ানোর পরও তামাকপণ্য সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে। দরিদ্রতম পরিবারগুলো তাদের আয়ের ২১ শতাংশ ব্যয় করছে তামাকপন্যের পেছনে। তামাকের জন্য এ টাকা খরচ না করে শিক্ষায় করলে মোট শিক্ষা ব্যয় ১১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

সাবেক এই গভর্নর বলেন, তামাকজাত দ্রব্য থেকে একটি বড় রাজস্ব সরকার পাচ্ছে। তাই সরকারের ভেতর একটি সঙ্কা রয়েছে যে তামাকজাত দ্রব্যে অতিরিক্ত করারোপের কারণে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যাবহার অতিরিক্ত কমে আসতে পারে। যার কারণে সরকারের রাজস্ব কমে আসবে বলে মনে করেন অনেকে। তাছাড়া মহামারি পরিস্থিতিতে অর্থনীতি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার কারণে এমন কোন সিদ্ধান্তই এখন নেয়া বিপদজনক যা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাঁধার কারণ হয়। কিন্তু বাস্তবে তামাকজাত পণ্যে অতিরিক্ত করারোপের ফলে এমনটা হবেন।

এসময় তিনি ফিলিপাইনের সিন ট্যাক্স রিফর্ম অ্যাক্ট ২০১২ এর উদাহরণ দিয়ে বলেন, ফিলিপাইনে তামাকজাত পণ্যে এক্সাইজ ট্যাক্স চার গুণের বেশি বাড়ানোয় ধারাবাহিকভাবে দর বৃদ্ধির কারণে ধূমপায়ীর হার ৬ বছরে ২৮ থেকে ৩০ শতাংশের নিছে নেমে এসেছে, কিন্তু সিগারেট বিক্রি কমলেও, এ থেকে আসা রাজস্ব বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। করারোপই যে তামাক ব্যাবহার হ্রাসের সবচেয়ে কার্যকর উপায় তা ফিলিপাইনের দ্বারা প্রমানিত।

তিনি আরও বলেন, তামাকপণ্য বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত করের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্বাস্থ্য খাতে এবং আরেকটি অংশ তামাক চাষে যুক্তদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করতে হবে। কর আরোহণে যুক্ত কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করার জন্য একটি প্রণোদনা কাঠামো দাঁড় করানো যেতে পারে।

আতিউর রহমান বলেন, ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সরাসরি তামাক ব্যাবহার করলেও, অন্যান্য বিষয় বিবেচনার ভিত্তিতে গণ্নাকৃত ঝুঁকি সূচকের গড় মান ৪৭ শকাংশ। এবং প্রায় ৮০ শতাংশ জেলাই উচ্চ বা মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ মো. শফিউল ইসলাম, গাইবান্ধা-৩ আসনের সাংসদ এডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, মহিলা সাংসদ নাজমা আকতার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ ড. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, পটুয়াখালী-৩ আসনের সাংসদ এস. এম. শাহজাদা, জামালপুর-৫ আসনের সাংসদ  মো. মোজফফর হোসেন, লক্ষীপুর-৪ আসনের সাংসদ আবদুল মান্নান, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর সোহেল রেজা চৌধুরী, ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের হেড অফ প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অীপসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, উন্নয়ন সমন্বয়ের পলিটিক্যাল অ্যানালিস্ট ড. মাহবুব হাসান এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান। বৈঠকের শেষে ধন্যবাদ বক্তব্য দেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারি শাহীন উল আলম।

বৈঠকে বক্তরা বলেন, মাদক সেবনকারীদের প্রথম ধাপ হলো তামাক। যুবক ছেলে মেয়েরা যখন তামাক পণ্য তথা সিগারেট সেবন শুরু করে তখনই তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। শুধু পণ্যের উপর করাপোর করে কিংবা ট্যাক্স বাড়িয়ে তামাক সেবন প্রতিরোধ করা সম্ভব কিনা সেটাও এখন প্রশ্নের দাবিদার। তামাক চাষীদের উপরও গুরুত্বারোপ দরকার। তামাক চাষীদের মার্ক করে তাদের আইনের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।

তারা বলেন, আমাদের প্রতিটি জেলায় কি পরিমাণ তামাক চাষী আছে তার কোন সঠিক তথ্য সরকারের কাছে নেই। চাষীদের সঠিক সংখ্যা গণণা করে তাদের চাষাবাদের উপর অতিরিক্তি করারোপ করা দরকার। তাতে একদিকে যেমন তামাক চাষও কমবে, অন্যদিকে জমির উর্বরতাও বাড়বে। ফসলী জমিও নষ্টের সম্মুখিন হবে না। তাছাড়া গ্রামের যে ছোট্ট ছোট্ট বাঁচ্চারা তামাক চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ক্ষতির সম্মুখিন হয়, তাদের সংখ্যাও কমে আসবে।

বক্তারা আরও বলেন, তামাকজাত পণ্যের উপর কর বাড়িয়ে ধুমপানে নিরুৎসাহিত করা যায় কিনা সেটা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সাধারণত গ্রামের মানুষগুলোই বেশি ধুমপান করে। কিন্তু গ্রামের মানুষের আয় বেড়েছে বহুগুণে। আগে যারা দিনে পঞ্চাশ টাকা আয় করতো তারা এখন দিনে ধুমপানের জন্য ৫০ টাকা ব্যয় করার সমর্থ রাখে। তাদের দৈনিক আয় এখন বেড়ে ৬-৭শ’ টাকায় উন্নিত হয়েছে। তাই পণ্যের উপর করারোপ করে ধুমপানে নিরুৎসাহিত করা কতটা সম্ভব তা এখন চিন্তার বিষয়।

অর্থসূচক/এমআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.