খালেদা জিয়ার প্রতি যথেষ্ট উদারতা দেখিয়েছি, আর কত: প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার যথেষ্ট উদারতা দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু দিয়েছি, তাকে যে বাসায় থাকতে দিয়েছি, তাকে যে ইচ্ছা মতো হাসপাতালে নিচ্ছে চিকিৎসা করাতে এটাই কি যথেষ্ট না? এটাই কি অনেক বড় উদারতা আমরা দেখাইনি? সেটাও তো দেখিয়েছি, আর কত! ৪৪ সালে যদি তার জন্ম হয় তার বয়স কত? সেটাও তো দেখতে হবে।

বুধবার (০৮ ডিসেম্বর) যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বড় বোন আর ভাই আমার কাছে এসেছে। বোন-বোনের স্বামী, ভাই এরা সব এসেছিল। তারা আমার কাছে আসলো যখন, খুব স্বাভাবিকভাবে রেহানাও আমার সঙ্গে উপস্থিত ছিল। মানবিক দিক থেকে আমি তাকে তার বাড়িতে থাকার, আমার এক্সিকিউটিভ পাওয়ারে যতটুকু করতে পারি, নির্বাহী যে ক্ষমতা আমার আছে সেটার মাধ্যমে আমি তার সাজাটা স্থগিত করে, তাকে তার বাসায় থাকার অনুমতি এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশে সব থেকে দামী যে হাসপাতাল, যে হাসপাতাল সবচেয়ে ব্যয়বহুল, সেখানেই কিন্তু তার চিকিৎসা হচ্ছে। তার ছেলের বউ তো ডাক্তার। তারেকের বউ ডাক্তার, শুনেছি সে নাকি অনলাইনে শাশুড়িকে দেখে, কই ছেলে-ছেলের বউ তো কোনদিন দেখতে আসলো না। অবশ্য কোকোর বউ এসেছে। তারা তো আসেনি। ’

খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে পুঁজি করে বিএনপি আন্দোলন করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তো যাই হোক তবু বিএনপি এতদিন পরে একটা সুযোগ পেয়েছে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার, এই দাবিতে তারা আন্দোলন করছে। খুব ভালো, তারা আন্দোলন করুক। কিন্তু আমার যতটুকু করার ছিল সেটা কিন্তু করেছি।’

খালেদা জিয়া তার সরকার আমলে এরশাদ, রওশন এরশাদসহ অনেককে কারাবন্দি রেখে চিকিৎসার সুযোগ দেননি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এ দেশে কী অবস্থা ছিল? আজকে তার চিকিৎসার জন্য এত চেঁচামেচি করে বেড়াচ্ছে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে আমাদের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান যখন অসুস্থ, তাকে সিএমএইচে পর্যন্ত চিকিৎসা করতে দেয় নাই। এমনকি তিনি যখন আইসিইউতে ভর্তি তাকে স্টেচারে করে কোর্টে নিয়ে হাজির করেছে। আর এরশাদকে কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল, তাকে চিকিৎসার জন্য কোনোদিন সুযোগ দেয়নি। রওশন এরশাদকে দেয়নি।’

জিয়াউর রহমানের সময়কার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায়, আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল, ঘা শুকায়নি- সেই ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে জেলে জিয়াউর রহমান ভরেছিল। ঠিক একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর, তাকেও তখন জেলে দিয়েছিল, তারও তখন টিবি হয়েছিল অসুস্থ ছিল, তাকেও জেলে দিয়েছিল। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ রকম বহু অন্যায়-অবিচারের কথা। এমনকি আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে, বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবের হোসেন, শেখ সেলিমসহ বহু নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের অকথ্য অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। নাছিমকে তো এমন অত্যাচার করেছিল যে, তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়; যা হোক সে বেঁচে গেছে। দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে। আবার সেই অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া দেখে উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরনের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি।’

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞাসা করি, তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে, তারা যে সহযোগিতা চায়, খালেদা জিয়া কি আচরণ করেছে; ২১ আগস্ট যে গ্রেনেড হামলা তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, কোন দিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না- এই বক্তৃতাই তো খালেদা জিয়া দিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। তো আল্লাহর খেলা এটা তো বোঝা ভার। বরং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেনি, বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারেনি। এটা তার ওপরই ফলে গেছে।’

অনেকের দ্বৈত মানসিকতা কেন- প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এসব কথা আর বলতে চাই না। আমি বললাম ইচ্ছে করেই, তার কারণ আমাদের যুবলীগের নেতাকর্মীদের জানতে হবে। কারণ নানা ধরনের কথা আসে, এ দেশের মানুষ একটা অদ্ভুত চরিত্রের। তারা দেখি একটা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে, আবার দুর্নীতিবাজের জন্য কান্নাকাটিও করবে। তাকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসাও করতে হবে। যে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত। এই যে এই ধরনের দ্বৈত মানসিকতা কেন? এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করো না- এটা কোরআন শরীফের নির্দেশ। নবী করিম (সা.) বলে গেছেন। আর এতিমের অর্থই আত্মসাৎ করেছে। কাজেই সে সাজা পেয়েছে এবং সেই সাজা সে ভোগ করছে।’

স্বজন হারানোর বেদনায় আরও বেশি আঘাত দিতে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চার পাঁচটা তারিখ (জন্মদিন) হয় কীভাবে? কোথাও ৫ সেপ্টেম্বর, কোথাও ১৯ আগস্ট; আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে হয়ে গেলো ১৫ আগস্ট। এ রকম ১৫ আগস্ট জন্মদিন করে, কেক কেটে উৎসব করার অর্থটা কী? ওই দিন আমরা যারা বাবা-মা, ভাই হারিয়েছি। আমাদের মনে আঘাত করা, আমাদের কষ্ট দেওয়া, এটাই তো! এই কষ্টটা দেবার জন্যই তো খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট তার জন্মদিবস পালন করে। আমার কাছ থেকে আর কত আশা করে তারা? কীভাবে আশা করে? সেটাই আমার প্রশ্ন। ’

আরও আঘাত দিতে জিয়া-খালেদা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কতটা জঘন্য মনোবৃত্তি, সেটাই মানুষকে জানতে হবে। কত হীনমন্যতায় ভোগে খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না, পুরস্কৃতই শুধু না—তাদের এই কাজ করার সকল উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে আমাদের আরও আঘাত দেওয়া। একে তো আমরা সর্বহারা ছিলাম, তারপর বিদেশে থাকতে হয়েছে, জিয়াউর রহমান আমাদের আসতে দেয়নি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই এরা আমাদের কাছ থেকে কী আশা করে? আমরা যতটুকু দিয়েছি, তাকে যে বাসায় থাকতে দিয়েছি, তাকে ইচ্ছেমতো হাসপাতালে নিচ্ছে, চিকিৎসা করছে- এটাই কি যথেষ্ট না? এটাই কি অনেক বড় উদারতা আমরা দেখাইনি? উদারতা দেখিয়েছি, আর কত? আর ৪৪ সাল যদি তার জন্ম হয়, তবে তার বয়স কত? সেটাও দেখতে হবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল।

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.