রেমিট্যান্স কমেছে ২৫ শতাংশ

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কমছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৪০ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাঙালিরা। এই অঙ্ক গত দেড় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে ২৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তত্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ৪০ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। গত বছরের নভেম্বরে পাঠিয়েছিলেন ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। এদিকে, আগের মাস অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ।

মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের বছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। কিন্তু সেই উল্লম্ফন আর নেই। এখন ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। প্রতি মাসেই কমছে রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর রেমিট্যান্স প্রবাহেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওই বছরের এপ্রিলে মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। মে মাসে তা বেড়ে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারে ওঠে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

এর ধারাবাহিকতা দেখা যায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরোটা সময়জুড়েই। ১২ মাসের মধ্যে সাত মাসই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।

কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথম মাস জুলাইয়ে আসে ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। আগস্টে আসে ১৮১ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ (জুলাই-নভেম্বর) ৮৬০ কোটি ৯২ লাখ (৮.৬০ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এই হিসাবে পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনার কারণে অবৈধ চ্যানেল হুন্ডি বন্ধসহ আরও কয়েকটি কারণে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি এসেছিল। এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রেমিট্যান্সও কমেছে। বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে এখন যেটা রেমিট্যান্স আসে, সেটাই আসলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের প্রকৃত চিত্র। এছাড়া, এখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় প্রবাসীদের খরচ বেড়েছে। ভ্রমণ-শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে খরচ করছেন তারা। এ কারণেই আগের মতো পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন না।

প্রসঙ্গত, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। যা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.