অক্টোবরেও রেকর্ড পরিমাণ এলসি ওপেন

পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার পরিমাণ বাড়ছেই। প্রতি মাসেই রেকর্ড হচ্ছে। সর্বশেষ অক্টোবর মাসে প্রায় সাড়ে ৭ বিলিয়ন (৭৪২ কোটি ১৬ লাখ) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা।

বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৬৩ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিপুল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২৭ দশমিক ৩২ বিলিয়ন (২ হাজার ৭৩২ কোটি) ডলারের এলসি খুলেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। এর আগে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে ১৭ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। সেই হিসাবে এই চার মাসে দেশে এলসি খোলার পরিমাণ বেড়েছে ৫২ দশমিক ২৬ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেসব দেশের মানুষ আবার নতুন উদ্যমে পণ্য কেনা শুরু করেছিল। দেশের অভ্যন্তরেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ফলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীরাও নতুন উদ্যোগে উৎপাদন শুরু করেছিলেন। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রতি মাসেই বাড়ছে এলসি খোলার পরিমাণ। এসময়  শিল্পের কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতিসহ (ক্যাপিটাল মেশিনারি) সব ধরনের পণ্য আমদানিই বেড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ অন্য সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এলসি খুলতে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে বলে জানান তারা।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য আমদানির জন্য ৬ হাজার ৭০৪ কোটি (৬৭.০৪ বিলিয়ন) ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খুলেছিলেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। ওই অঙ্ক ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবর সময়ে এলসি খুলতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ হয়েছে শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে। এই খাতে মোট ৯৭০ কোটি ২৭ লাখ (৯.৭০ বিলিয়ন) ডলার ব্যয় করতে হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি।

এরপরেই রয়েছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি। এই খাতের জন্য ১৮৩ কোটি ২০ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। একই সময়ে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলা হয়েছে ২৩৮ কোটি ২০ লাখ ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যান্য শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ৭৬৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এছাড়া জ্বালানি তেল আমদানির জন্য ২৩৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ; ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশ। খাদ্যপণ্য (চাল ও গম) আমদানির এলসি খোলা হয়েছে ২৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার।  এই খাতে ৬০ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.