স্বপ্ন এখন পরিচালন মুনাফায় 

পরিচালন পর্যায়ে মুনাফার সড়কে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় রিটেইল চেইনশপ ‘স্বপ্ন’। পর পর দুই প্রান্তিকে পরিচালনা মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনাভাইরাস জনিত সঙ্কটের মধ্যেও মুনাফায় আসতে পারার বিষয়টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। তাদের আশা, চলতি প্রান্তিকসহ আগামী দিনগুলোতেও মুনাফার এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

‘স্বপ্ন’ হচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠি এসিআই লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসিআই লজিস্টিকসের ব্র্যান্ড নাম। এসিআই লজিস্টিকসের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় দু’শ আউটলেট রয়েছে। স্বপ্ন সুপারশপের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নিজের পরিধি বাড়িয়ে চলেছে স্বপ্ন। এর মধ্যে গত দেড় বছরেই এর আউটলেট সংখা বেড়েছে ৭৭টি।

সুপার শপ চেইনের ব্যবসা একটি পুঁজিঘন ব্যবসা। এর জন্য বিপুল পরিমাণ চলতি মূলধন প্রয়োজন হয়। স্বপ্নের ক্ষেত্রে চলতি মূলধনের চাহিদা আরও বেড়ে যায় কোম্পানিটির টানা ব্যবসা সম্প্রসারণ তথা নতুন নতুন আউটলেট খোলার কারণে। ইক্যুইটি তথা নিজস্ব মূলধন কম থাকায় স্বপ্নকে উচ্চ সুদের ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে চলতি মূলধনের এই চাহিদা পূরণ করতে হয়েছে। তাই শুরু থেকেই আর্থিক চাপের মধ্য দিয়ে এগুতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। এ কারণে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মুনাফার মুখ দেখতে পারেনি।

তবে নানা উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে আরও বেশি সংখ্যক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা, স্বপ্নকে তাদের নাগালের কাছে নিয়ে যাওয়া, পণ্য বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং পরিচালন ব্যয় কমিয়ে আনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের বৃত্ত ভেঙ্গে বের আসতে সক্ষম হয়েছে।

সুপারশপটি ২০২০-২১ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সময়ে ১ কোটি ৬ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। মুনাফার এই ধারা ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রথম প্রান্তিকেও অব্যাহত ছিল। এ সময়ে স্বপ্ন ৩৭ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে।

চলতি প্রান্তিকের অক্টোবর মাসেও একই ধারায় এগিয়েছে কোম্পানিটি। তাই এই প্রান্তিকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পরিচালনা মুনাফার আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে স্বপ্নের ১৯২ টি আউটলেট আছে। এর মধ্যে নিজস্ব আউটলেট ৫৫টি। আর ফ্র্যাঞ্চাইজি আছে ১৩৭টি। প্রতিষ্ঠানটি আউটলেটের সংখ্যা বাড়ানোর উপর জোর দিচ্ছে। আগামী বছরটিকে (২০২২) একরকম সম্প্রসারণের বছর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

করোনা মহামারিতে গ্রাহকদের নিরাপত্তায় নেওয়া নানা কার্যক্রম এবং হোম ডেলিভারি চালুর মাধ্যমে আস্থা ও বিশ্বাসের নতুন একটি জায়গা তৈরি করতে সক্ষম হয় স্বপ্ন। অন্যদিকে নিজস্ব স্টোরের পাশাপাশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থা আউটলেটের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনেকটা গেম চেঞ্জারের মতো কাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক সম্প্রসারণে যাচ্ছে স্বপ্ন।

আউটলেট সংখ্যা বাড়ানোর প্রসঙ্গে এসিআই লজিস্টিকসের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন, আমরা স্বপ্নকে পাড়ার সুপারস্টোরে পরিণত করতে চাই। এর অর্থ স্বপ্ন যেন সব সময় মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই থাকে। একটি সুপারশপ বা কেনাকাটার নির্ভরযোগ্য আউটলেটের জন্য যেন তাদেরকে এদিক সেদিক ছুটতে না হয়, খুঁজতে না হয়।

অর্থসূচককে তিনি বলেন, পর পর দুই প্রান্তিকে মুনাফা করা আমাদের জন্য খুবই উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সাধারণত সুপারমার্কেটের ব্যবসায় মুনাফার দেখা পেতে বেশ সময় লাগে। যাত্রার শুরুতেই আমাদের ৭০টির বেশি আউটলেট ছিল। সেগুলো ব্যবসায় খুব একটা ভালো করছিল না, তাই অনেকগুলো আউটলেট বন্ধ করতে হয়। আমাদের অনেক বিনিয়োগ ছিল। অবচয় খরচসহ আরও অনেক খরচ ছিল, যা পরিচালন খরচের মধ্যেই চলে আসে। এ ছাড়া সুপারশপের ব্যবসায়িক মডেলে দেখা যায়, ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকের বিশ্বাস অর্জনে বেশ সময় লাগে।

সাব্বির হাসান নাসির জানান, সুপার মার্কেট ক্যাটাগরিতে ২০১৬ সাল থেকে টানা ৫ বছর টানা বেষ্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে স্বপ্ন। এ ছাড়া গত দুই বছর সমস্ত ক্যাটাগরির মধ্যে প্রথম দশটি ব্র্যান্ডের একটি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে স্বপ্ন। ব্র্যান্ড লেভেলে বাংলাদেশের গ্রাহকদের কাছে স্বপ্ন এখন একটি গ্রহণযোগ্য নাম।

জানা গেছে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে স্বপ্নের বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৯৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। সারা দেশে স্বপ্নের ১৯০ টিরও বেশি আউটলেটে ৪ হাজার ৩০০ এর বেশি কর্মী নিযুক্ত রয়েছে। দিনে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি গ্রাহকসেবা প্রদান করে স্বপ্ন।

সাব্বির হাসান নাসির বলেন, আমাদের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের নিরলস পরিশ্রম ও গ্রাহকের ভালোবাসায় স্বপ্ন এখন একটি জায়গায় এসেছে। আমরা আশাবাদী যে এই অর্থবছরে আমরা পরিচালন পর্যায়ে মুনাফা করব।

তিনি বলেন, বিপুল ঋণের চাপ না থাকলে স্বপ্ন আরও আগেই নীট মুনাফায় যেতে পারতো। বিশ্বব্যাপী মডেল হচ্ছে, সফল সুপারশপ চেইনে ঋণের পরিমাণ হয় মূলধন (Equity) এর তিন ভাগের একভাগ। কিন্তু স্বপ্নের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ অন্যরকম। স্বপ্নের ঋণের ভাগ ইক্যুইটির তিনগুণ।

সাব্বির নাসির বলেন, আমাদের ইক্যুটি বেশি থাকলে ঋণের সুদের এতটা চাপ নিতে হতো না। তাতে এখনই আমরা সম্পূর্ণ মুনাফার মুখ দেখতে পেতাম।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে স্বপ্ন পরিচালন মুনাফা থেকে নিট মুনাফায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে। যদি ইক্যুইটির পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হয়, তাহলে তার আগেই সম্ভব হবে নিট মুনাফা যাওয়া।

ইক্যুইটি বাড়ানোর সহজ উপায় কী হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসিআই গ্রুপের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান অল্প করে ইক্যুইটিতে অংশ নিলে স্বপ্নের ইক্যুইটি অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া বিদেশী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও ইক্যুইটির সংস্থান করা যেতে পারে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.