‘বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান বাংলাদেশ’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে। দেশি বিনিয়োগও বাড়ছে। সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেন, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নসহ ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সহজ উপায় বের করতে নানামুখী কর্মতৎরতা হাতে নেয়া হয়েছে।

দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে দুই দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট সামিট (আইআইএস) আজ রোববার শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ ভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড (বিডা) এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এবারের সামিটে অংশ নিচ্ছে ৫৪টি দেশ। অনলাইনে যুক্ত হতে ২ হাজার ৫৭৪ জন বিদেশ থেকে এবং ২ হাজার ১০৯ জন বাংলাদেশ থেকে নিবন্ধন করেছেন।

সামিটে যোগ দিতে বেশ কয়েকটি দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। অনুষ্ঠানে সরাসরি যোগ দিতে সৌদি আরবের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছে। এছাড়া ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী ও চীনের ভাইস মিনিস্টার (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। এছাড়া জাপানের একজন ভাইস মিনিস্টারের বার্তা ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি পড়ে শোনান।

সামিটে বিডার পক্ষ থেকে ১১টি খাতকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কেউ যদি এর বাইরে অন্য কোনো খাত নিয়ে আগ্রহ দেখায়, সেটি নিয়েও আলোচনার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

এর আগে ২০১৬ সালে সর্বশেষ বিনিয়োগ সম্মেলন (ইনভেস্টমেন্ট সামিট) হয়েছিল।

সালমান এফ রহমান বলেন, এদেশে বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে আমরা নীতি সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। বাংলাদেশের জিডিপি ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। এদেশে মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। নারী ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ বাংলাদেশ এরই মধ্যে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে এগিয়ে গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়া এদেশের প্রান্তিক পর্যায় মানুষকে ছুঁয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সফলতা পেতে পারে। এদেশে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন বলে মনে করেন তিনি।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও বন্দরসহ বড় বড় বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গত ১২ বছরে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে পেরেছি। বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের বড় বাজার। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে। বাড়ছে দেশি বিনিয়োগও। একইসঙ্গে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে’।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘গত কয়েক বছর ৬ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ বেড়ে ৪১১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু গড় আয়ও বেড়ে দুই হাজার ৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা আগের হিসেবে ছিল দুই হাজার ২২৭ ডলার। দেশের অভ্যন্তরে কৃষি, শিল্প ও সেবাসহ সব খাত এগিয়ে যাচ্ছে। সবজি উৎপাদনে আমরা বিশ্বে তৃতীয়, চাল উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছি’।

‘তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ, আইসিটি, প্লাস্টিক, চামড়াজাতীয় পণ্যসহ বাংলাদেশে কয়েকটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন হচ্ছে। বাংলাদেশ আগের মতো নেই। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক বাংলাদেশ। যেখানে বিনিয়োগে সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।’

বিডার আয়োজনে সামিটে সহযোগী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটি (বেপজা), বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক অথরিটি (বিএইচটিপিএ), পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)।

এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন ও ইউকেএইড এ সামিট আয়োজনে সহায়তা করছে।

দেশের সম্ভাব্য খাতের সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরে বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকে উৎসাহিত করাই এর মূল লক্ষ্য।

সম্মেলনের প্রথম দিন বিজনেস সেশনে ‘ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিক: দ্য রাইট মুভ’ শীর্ষক আলোচনা করা হয়। এছাড়া ক্যাপিটাল মার্কেট: দ্য রাইজিং টাইগার, পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি: চার্জ অ্যাহেড, লিগাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস: এনশিউরিং সাসটেইন গ্রোথ, এগ্রোবিজনেস: গ্রোথ বাই ন্যাচার, লেদার অ্যান্ড লেদারগুডস: স্টেপ ইট আপ, রেডিমেড গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল: ওয়েভিং দ্য ওয়ে, ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিকস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড প্লাস্টিক গুডস: রাইড দ্য কারেন্ট—এসব বিষয়ে সেশন অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় দিন সোমবার প্লেনারি সেশনে থাকছে ইনভেস্টমেন্ট কমপিটিটিভনেস অ্যান্ড বিজনেস এনভায়রনমেন্ট: রেসিং নিউ হাইস্ট ইন দ্য নিউ নরমাল শীর্ষক আলোচনা। দুটি বিজনেস সেশান ইন পেরারালে থাকছে ইকোনমিক জুন: এক্সেডিং অল এক্সপেক্টেশনস, ব্লু ইকোনমি: ডিসকভার দ্য ফিউচার, লেভেরাজিং ফোর্থ-আইআর: নিউজ এভিনিউ ফর ইনোভেটিভ ইনভেস্টমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড ফার্মাসিটিক্যালস: অ্যাফর্ডেবল ওয়েলবিং: হেলদি লিভিং ফর অল শীর্ষক আলোচনা।

রাজধানীর রেডিসন হোটেলে শুরু হওয়া সম্মেলনটি শেষ হবে সোমবার। সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.