আবরার হত্যা মামলার রায় আজ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বীকে (২২) নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতের সেই ঘটনার পৈশাচিকতায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল দেশবাসী। হত্যাকাণ্ডের দুই বছর এক মাস ২২ দিন পর আজ সেই হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ হত্যায় জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের আশা, তাদের মক্কেলরা খালাস পাবেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ মিঞা বলেন, রোববার দুপুরের আগে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলার সব সাক্ষী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি উপস্থাপন করেছি। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছি।’

অপরদিকে আসামি শামীম বিল্লাহ, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ও এস এম মাহমুদ সেতুর পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘আদালতে সব তথ্য উপাত্ত তুলে ধরেছি। আশা করছি, এই মামলা থেকে তারা খালাস পাবেন। কারণ এই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।’ তিনি বলেন, ‘মামলার এজাহারে মিজান ও সেতুর নাম নেই। একই সঙ্গে তাদের তিনজনের বিরুদ্ধে এজাহারে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। ’

আসামি অমিত সাহার আইনজীবী মুনজুর আলম বলেন, ‘আসামি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, কোনো সাক্ষী তার নাম বলেননি এবং তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি। তাই তিনি খালাস পাবেন বলে আশা করছি।’

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ৭ অক্টোবর ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এরপর ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন মো. বরকত উল্লাহ। পরে ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন।

অভিযোগপত্রে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়, তারা হলেন – বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইন বিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, ছাত্রলীগকর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।

আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। বাকি ২২ জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। এ মামলায় আসামিদের আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.