১০ ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি ১৫৩৫১ কোটি টাকা

বিভিন্ন ছাড়ের পরও ব্যাংক খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণ। আর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় পুরো ব্যাংকিং খাতই ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১০ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। এর মধ্যে একটিরই ঘাটতি ৫ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। আর পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৯০ কোটি টাকা।

যদিও সার্বিক ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়ার নজির খুবই কম দেখা যায়। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনোভাবে ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো-প্রভিশন সংরক্ষণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণীকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব-স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কু-ঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ও নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৭২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করতে পেরেছে ৬৬ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। ফলে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। তিন মাস আগে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ সময়ে ১০ ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে। ঘাটতির পরিমাণ ১৫ হাজার ৩৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। তিন মাস আগে ১১টি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৭৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ঘাটতিতে থাকা ১০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৪টি। এসব ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ১২ হাজার ২৬ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের ব্যাংক রয়েছে ৫টি, যাদের ঘাটতি ৩ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। আর বিশেষায়িত খাতের একটি ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ২১ কোটি টাকা।

করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শর্ত শিথিলের কারণে ২০২০ সালজুড়ে ঋণ শোধ না করলেও কেউ খেলাপি হননি। এ বছর নতুন করে আগের মতো ঢালাও ছাড়ের সুযোগ রাখা না হলেও নতুন করে কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-যেসব মেয়াদি ঋণ চলতি বছরের মার্চের মধ্যে পরিশোধ করার কথা ছিল, ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে তা জুন পর্যন্ত পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়।

চলমান ঋণের ওপর ২০২০ সালে আরোপিত অনাদায়ী সুদ একবারে পরিশোধ না করে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া তলবি ঋণ চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আটটি কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব সুবিধা দেওয়ার পরও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর-এই নয় মাসে নতুন করে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-এ তিন মাসে বেড়েছে ১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। সবমিলে সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১২ শতাংশ।

অর্থসূচক/এমএস/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.