খেলাপি ঋণ আবারও এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে

দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আবারও এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১৬৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে পাঁচ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৬৮ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। আলোচ্য সময়ে এই খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা। একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা। একই সময়ে বিদেশি ব্যাংকগুলোর দুই হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ও বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের পুরো সময় ঋণ পরিশোধে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া নীতি সুবিধার কারণে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করেও কেউ খেলাপি হননি। এখন এই বিশেষ সুবিধা বহাল না রাখলেও ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আবারও বাড়তে শুরু করেছে।

তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া ছাড়ের কারণে যেভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ার কথা ছিল, সেভাবে বাড়েনি। ঋণ শোধ না করেও অনেকে খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়নি।

অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশে নথিপত্রে খেলাপি ঋণ যত দেখানো হয়, প্রকৃত চিত্র তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হবে। ঋণ পুনর্গঠন, পুনঃতফসিলসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় ঋণ খেলাপিরা ঋণ পরিশোধ করে না। ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণ আদায়ে খুব বেশি উদ্যোগ নেয় না। এছাড়া অনেক গ্রুপের ঋণ আদায় না হলেও বছরের পর বছর খেলাপি করা হয় না। আবার একই ঋণ বারবার পুনঃ তফসিল করে ঋণ নিয়মিত রাখা হয়। এসব কারণে খেলাপি ঋণের দুষ্টচক্র থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারছে না। তাদের মতে, খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার তুলনায় অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। এবং মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.