জলবায়ু পরিবর্তনে সরকারের দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের কৌশল প্রণয়নের দাবি

সাম্প্রতিক কপ ২৬ বা বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের ফলাফলকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক বলে অভিহিত করেছেন নাগরিক সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।

তারা বলেন, এই সম্মেলনে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের বিষয়ে, বিশেষ করে অভিযোজন এবং ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেই। যে কারণে জলবায়ু পবিপদাপন্ন দেশগুলোর অভিযোজন কার্যক্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নের উপর জোর দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক কৌশল প্রণয়নের জণ্য সরকারের কাছে দাবি জানায় নাগরকি সমাজের সংগঠনের কয়েকটি নেটওয়ার্ক।

আজ সোমবার (২২ নভেম্বর) ‘কপ ২৬ এর ফলাফল ও ভবিষ্যত প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনার থেকে এই দাবি তুলে ধরেন নাগরিক সমাজ।

ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, এওএসইডি, বিপনেট সিসিবিডি, সিপিআরডি, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) এবং ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি)।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি। তিনি বলেন, কপ ২৬ এর ফলাফল আসলেই হতাশাজনক, কারণ এর সিদ্ধান্তগুলি সামগ্রিকভাবে প্যারিস চুক্তির নীতিকে ভেঙে দিয়েছে, বাস্তুচ্যুতিসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টিকে থাকার বিষয়গুলো বিবেচনার বদলে তারা নানা ধরনের ব্যবসায়িক ধাঁচের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সোচ্চার ও জোরালো ভূমিকার প্রশংসা করেন, পাশাপাশি সম্মেলনের  বিভিন্ন আলোচনায় সরকারি প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সরকারকে আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে হবে।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ইক্যুইটিবিডির সৈয়দ আমিনুল হক। তিনি বলেন, কপ ২৬-এর কাছে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো, অভিযোজন কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য এবং ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অধিকতর অর্থায়নের জোর প্রত্যাশা ছিলো। আশা করা হয়েছিলো যে, এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত অর্থায়নের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিছু উন্নত দেশ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের বিরোধিতার কারণে এটি ঘটেনি। তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে তাদের তথাকথিত নেট জিরো ইমিশন লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত যুক্তরাজ্যের অবস্থানের নিন্দা করেন, কারণ এটি প্রকৃতপক্ষে বড় নির্গমনকারীদের শূন্য নির্গমন লক্ষ্যের পরিবর্তে তাদের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজস্ব অর্থায়নের কৌশলসহ শূন্য নির্গমন লক্ষ্যমাত্রার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ইক্যুইটিবিডির মোস্তফা কামাল আকন্দের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু নেগোশিয়েসনের প্রধান অধ্যাপক ড. আইননু নিশাত, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. মোস্তফা সরোয়ার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফ জামিল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জলবায়ু আলোচক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিপনেট সিসিবিডর মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা, সিডিপির মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম, এওএসইডি-খুলনার শামীম আরেফিন, এনজিও ব্যক্তিত্ব এমরানুল হক এবং দৈনিক জনকণ্ঠের কাওসার রহমান।

তারা বলেন, প্রস্তাবিত নেট জিরো নির্গমন’ লক্ষ্যমাত্রা একটি মিথ্যা এবং চাতুর্যপুর্ণ সমাধান প্রস্তাব এবং যুক্তরাজ্য দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এই লক্ষ্য গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে একটি কার্বন ঔপনিবেশিকতার দিকে চলে যাচ্ছে। কারণ তারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর দুর্দশা নিয়ে বাণিজ্য করার অপচেষ্টা করছে। দরিদ্র এবং দুর্বল দেশগুলি কার্বন নির্গমন কম করে এবং ভবিষ্যতে বড় দূষণকারী দেশগুলো তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তথাকথিত কার্বন ক্যাপচার কার্যক্রম গ্রহণ করতে বাধ্য করবে।

তারা আরো বলেন, কয়লা ব্যবহার ও বিকল্প জ্বালানি বিষয়ে সরকারের অবস্থানের মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের নিজস্ব সমস্যাগুলো আগে উপলব্ধি করার পরামর্শ দেন এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর কার্বন হ্রাস কৌশল এবং বিকল্প শক্তির কৌশল নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণেরও পরামর্শ দেন।

তাদের মতে, কপ ২৬-এ, উন্নত দেশগুলি ২০২৩ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসছে, এই বিষয়ে তারা তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করেছে, যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অভিযোজনের জন্য থোক বরাদ্দেরও সমালোচনা করেছেন তারা। এছাড়াও ভবিষ্যতে নাগরিক সমাজ প্রতিনিধি এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞদেরকে আলোচনা প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন।

অর্থসূচক/আরএমএস/এমএস/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.