হাতি হত্যা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

শেরপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্য হাতি হত্যার হিড়িক লেগেছে। গত দুই সপ্তাহে ৭টি হাতিকে হত্যা করা হয়েছে। এ অবস্থায় হাতি রক্ষায় আইনের শরনাপন্ন হয়েছেন দেশখ্যাত ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার ও অ্যাক্টিভিস্ট আদনান আজাদ আসিফ ও ফারজানা ইয়াসমিনসহ তিনজন।

আজ রোববার (২১ নভেম্বর) তারা এই বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন।

আদালত সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র অনুসারে, রিট আবেদনে হাতি হত্যা বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে হাতি হত্যা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল চাওয়া হয়েছে তাতে।

রিটে পরিবেশ সচিব, বন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইন সচিব, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।

জানতে চাইলে রিট আবেদনকারী আদনান আজাদ অর্থসূচককে বলেন, বাংলাদেশের বুনো হাতি সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। ক্রমেই এদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। হাতি চলাচলের করিডোরগুলোর গেজেট করে তার বাস্তবায়ন করতে না পারায় ওইসব করিডোরের অনেক জায়গা অবৈধ দখলে চলে গেছে।  তাতে হাতির চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জীবন হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝেমধ্যেই হত্যার শিকার হচ্ছে হাতি। তাই করিডোরগুলোর বিষয়ে গেজেট জারি করে সেগুলো সংরক্ষণ করার দাবিতে আইনের শরনাপন্ন হয়েছি।

রিটের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান  বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্য হাতি মেরে ফেলা হচ্ছে। হাতি হত্যা বন্ধে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এবং রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।’

রিটটি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিটটির শুনানি হবে বলে তিনি জানান।

আইনজীবী বলেন, দেশে ১২টি এলিফ্যান্ট করিডোর রয়েছে। কিন্তু এসব এলাকা এলিফ্যান্ট করিডোর হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। অথচ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে হাতি চলাচলের জন্য করিডোর সংরক্ষণের কথা বলা আছে।

তিনি বলেন, করিডোর সংরক্ষণ না করায় মানুষ সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। হাতি চলাচলের পথে বাধা পেয়ে ওইসব ঘর-বাড়ি ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে। এতে মানুষ আর হাতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। আর এ কারণেই হাতি মেরে ফেলা হচ্ছে।

এ অবস্থায় হাতি হত্যা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আবেদন করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে সাংবাদিক ও ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার হাসান খন্দকার, জিয়াউর রহমান, মুগনিউর রহমান মনি ও অ্যাক্টিভিস্ট নাজিম আহমেদ বুনো হাতির উপর কীভাবে নির্মম অত্যাচার চালানো হচ্ছে, সে সম্পর্কিত নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন অর্থসূচকের কাছে। তারা সম্প্রতি শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় হাতির করডোর ঘুরে এসেছেন। তারা দেখেছেন, একাধিক অবৈধ দখলদার বনের গাছপালা কেটে সেখানে ধান ও সব্জির আবাদ করেছেন। আর ওই ফসল রক্ষায় চারপাশে দিয়েছেন জিআই তারের বেড়া। হাতিরপাল জমির কাছে আসছে মনে হলে জেনারেটর চালিয়ে ওই তারে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়। তাতে তড়িতাহত হয়ে অনেক হাতি মারা যায়। এছাড়া বনের মধ্যে তারা লোহার সরকী, বল্লমসহ নানা অস্ত্র মজুদ করে রেখেছেন। রাতের বেলায় ওই বল্লমের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে হাতির উপর ছুঁড়ে মারা হয়।

তারা বলেন, তারা শেরপুরে যেসব হাতি দেখে এসেছেন, তার কয়েকটির দেহে নানা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

উল্লেখ,  বাংলাদেশে যে হাতি পাওয়া যায়, সেগুলো এশিয় হাতি। বন্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা- আইইউসিএন এর হিসেবে বাংলাদেশে এশিয় প্রজাতির হাতির সংখ্যা ২৫০টি।  আইইউসিএনের মতে, এশিয় হাতি মহাবিপন্ন। এভাবে চললে অচিরেই বাংলাদেশ হাতি-শুন্য হয়ে পড়বে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.