‘আর্থিক খাতের সময়োপযোগী সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি’

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর্থিক খাতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক হিসাবে বিবেচনা করেছেন। বর্তমানে আর্থিক খাতের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ থাকলেও আর্থিক খাতের সময়োপযোগী সহযোগিতার কারণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অবিচার থেকে মানুষের মুক্তির জন্য একটি পরিকল্পিত অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুদ্রানীতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিষয়ক এক বিশেষ অধিবেশনে (প্লিনারি সেশন) এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদরা।

আজ সোমবার (১৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) -এ এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং ব্র্যাকের চেয়ারপার্সন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, গার্মেন্টস ও রেমিট্যাস এই দুই খাত উন্নয়নের ড্রাইভার হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশের উন্নয়নের ড্রাইভারে কৃষিও অন্যতম ভূমিকা রাখছে। আর্থিক খাতে কৃষিকে নতুন করে তুলে ধরার সময় এসেছে। একটি সস্তা শ্রমের অর্থনীতি থেকে উৎপাদনশীল শ্রমে নিয়ে যেতে হবে। কোভিড ধাক্কায় অনেক খাত পিছিয়ে পড়েছে। মানুষের মূল ঘাটতি চিহ্নিত করা দরকার এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এসময় বিশেষ সম্মনিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের চেয়ারপার্সন ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের দ্বারা প্রবৃদ্ধিতে যে ভূমিকা রাখছে তা খাটো করে দেখার উপায় নেই। একটি উন্নয়নমূলক কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত নীতি সহায়তা ছাড়াও মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশন (এমএফআইএস) থেকে ক্ষুদ্র ঋণের অধিকাংশ ঋণ গ্রহীতা এখন এ রূপান্তরিত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য পুনঃঅর্থায়নের ব্যবস্থা রেখেছে। কৃষি, এসএমই এবং অনানুষ্ঠানিক মাইক্রো স্মল মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস এমএসএমইএস খাতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর্থিক খাতের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে চ্যালেঞ্জ থাকলেও আর্থিক খাতের সময়োপযোগী সহযোগিতার কারণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক (আইএনএম) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের  (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরি বলেন, দারিদ্রতা দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি লাভ করেছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এতটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে এটিকে ‘টেস্ট কেস’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে বর্তমানে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. এম. এ. সাত্তার মন্ডল বলেন, বাংলাদেশে পরিকল্পিত অর্থনীতির আনুষ্ঠানিক যাত্রা সূচনা বঙ্গবন্ধুর প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (১৯৭৩-১৯৭৮) জুলাই ১৯৭৩ সাল থেকে হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অবিচার থেকে মানুষের মুক্তির জন্য একটি পরিকল্পিত অর্থনীতির ওপর জোর দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই প্রথম পরিকল্পনা কমিশন গঠনের জন্য আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন একদল নিবেদিত প্রাণ পেশাদার অর্থনীতিবিদদের একত্রিত করেছিলেন। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঐতিহাসিক রেকর্ড যে মাত্র দেড় বছরের সময়ের মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল।

ড. মোজাফফর আহমদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকিং খাতের অর্ন্তভূক্তিমূলক কার্যক্রমের কারণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ বিশেষ সাফল্য দেখিয়েছে। যা বিশ্বে এখন রোল মডেল।

সভাপতির বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার দিকে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে উল্লেখ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসাবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হতো। বঙ্গবন্ধু আর্থিক খাতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনুঘটক হিসাবে বিবেচনা করেছেন। একই ধারাবাহিকতায় বিআইবিএম দেশের আর্থিক খাতের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা এবং পরামার্শের চাহিদা মেটাতে ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

স্বাগত বক্তব্যে বিআইবিএমের অধ্যাপক (সিলেকশন গ্রেড) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী বলেন, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে তৎকালীন পাকিস্তানি ব্যাংক মালিকদের ব্যাপক ব্যাংক আমানত এবং মূলধন স্থানান্তর। ফলে বাংলাদেশের একটি বিধ্বস্ত ব্যাংকিং খাত উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শাখাকে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক হিসাবে ষোষণা করেছিলেন। বিদেশী ব্যাংকগুলো ছাড়া পাকিস্থানী উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন সমস্ত ব্যাংকগুলোকে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ করেছিলেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রাণবন্ততা ফিরিয়ে আনতে এই পদক্ষেপগুলো ছিল সময়োপযোগী।

প্রসঙ্গত, বিআইবিএম বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ত্রৈমাসিক জার্নাল ‘ব্যাংক পরিক্রমা’ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। যেখানে দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ব্যাংকার এবং গবেষকদের ১০ টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শুরু হয়েছে যা ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শেষ হবে।

অর্থসূচক/মৃত্তিকা সাহা/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.