মডেল তিন্নি হত্যা মামলার রায় আজ

বিজ্ঞাপনের মডেল সৈয়দা তানিয়া মাহবুব তিন্নিকে ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর হত্যা করার অভিযোগে সোমবার (১৫ নভেম্বর) বরিশাল-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কেশব রায় চৌধুরীর আদালতে মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে। গত ২৬ অক্টোবর মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিচারক তা পিছিয়ে নতুন দিন ধার্য করেন ১৫ নভেম্বর।

গত ২৬ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (২৬ অক্টোবর) এই মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আবারও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সেটি মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে ২৬ অক্টোবরেই যুক্তিতর্ক শেষ করতে বলেন বিচারক। রাষ্ট্রপক্ষ সেদিন বিকালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। আর রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করলেও ১৫ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানান আদালত।’

মামলার অভিযোগ জানা যায়, ২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে খুন হন তিন্নি। এর আগে ৬ নভেম্বর তিন্নিকে তার স্বামী সাক্কাত হোসেন পিয়ালের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করেন অভি। তিন্নিও তাকে তালাক দেন। ওই দিনই পিয়ালকে তার দেড় বছর বয়সী কন্যাসন্তানসহ রাজধানীর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর বিয়ে করার জন্য অভিকে চাপ দিতে থাকেন তিন্নি। একপর্যায়ে তিন্নি বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন।

১০ নভেম্বর রাতে মাথায় আঘাত করে তিন্নিকে হত্যা করা হয়। এরপর গুমের উদ্দেশ্যে ওই রাতে বুড়িগঙ্গার ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া হয় মরদেহ। কিন্তু পানিতে নয়, মরদেহটি পড়ে পিলারের উঁচু অংশে। পরদিন সকালে মরদেহ ঘিরে জমে উৎসুক জনতার ভিড়।

কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহালের পর ময়নাতদন্ত করে। মর্গে চারদিন রাখার পর ১৫ নভেম্বর অজ্ঞাত হিসেবে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তিন্নিকে।

এদিকে তিন্নির চাচা সৈয়দ রেজাউল করিম কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হারানো ডায়েরি করেন। মরদেহ উদ্ধারের দিন একই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. শফি উদ্দিন। অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের আসামি করা হয় মামলায়।

মামলাটি চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে ২০০২ সালের ২৪ নভেম্বর তদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত হয়। এরপর মামলার সবশেষ তদন্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর গোলাম ফারুক অভিকে একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ২০১০ সালের ১৪ জুলাই অভির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত। এরপর ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

জানা যায়, গোলাম ফারুক অভির উত্থান ঘটে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে। ছাত্র হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। এসএসসি এবং এইচএসসিতে বোর্ড পর্যায়ে মেধার সাক্ষর রাখেন। নব্বইয়ের গণআন্দোলন ঠেকাতে এরশাদের নজর পান অভি। ওই সময় অপহরণ ও মুক্তিপণ এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তিনি নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। তবে নব্বইয়ের গণআন্দোলনের চরম পর্যায়ে ডিসেম্বরের প্রথমদিকে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। আর মুক্তি পেয়েই পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। এরপর তিনি বিদেশে পাড়ি জমান।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.