পরিবহন ধর্মঘট: ভোগান্তির আরেকটি দিন

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। রোববার (৭ নভেম্বর) সকাল থেকে তৃতীয় দিনের মতো গণপরিবহন চলছে না। সকাল থেকে কর্মজীবী মানুষ পায়ে হেঁটে এবং কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে রিকশা-অটোরিকশায় কর্মস্থলে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, দূরপাল্লার যাত্রীরা ভেঙে ভেঙে ছোট পরিবহনে নানা দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

 

এ ছাড়া গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেট কার কিংবা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত ভাড়ায় নাজেহাল যাত্রীরা। এ সময় সড়কে একমাত্র বিআরটিসি বাসই চলাচল করছে। বিআরটিসির কিছু বাস ছাড়া কোনো বাস চলতে দেখা যাচ্ছে না। বাসও লঞ্চ বন্ধ ধাকার প্রভাব পড়েছে ট্রেনেও।

রাজধানীর এয়ারপোট রেলস্টসনে দেখা গেছে তীব্র ভিড়, গন্তব্যে যেতে ঝুঁকি নিয়ে বাদুর ঝোলা হয়ে ট্রেনের দরজায় দাড়িয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায় মানুষকে, অবার অনেকে সেই সুযোগটাও পাচ্ছে না।

নিশাত ফারজানা নিশি যাবেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে দুই ঘণ্টা যাবত অপেক্ষা করেও বাসে উঠতে না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অপর যাত্রী নাজমুল যাবেন বাড্ডা দীর্ঘ সময় অপেক্ষ করে পায়ে হেটেই কর্মস্থলে উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

এদিকে আজ বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে সরকারের একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে সেই বৈঠকে এ ব্যাপারে একটি সমাধান আসবে। এতে অবসান হতে পারে ভোগান্তির। বৈঠক সম্পর্কে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেন, ‘আগামীকাল (রোববার) বিআরটিএর ভাড়া পুনর্নির্ধারণ কমিটির বৈঠকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সে ব্যাপারে ইতিবাচক উদ্যোগ ও প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।’

গত শুক্রবার থেকে দেশের সবধরনের বেসরকারি উদ্যোগের সড়ক পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার দুপুরের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচলও। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ একযোগে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।

গত বুধবার রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। ৬৫ টাকার জ্বালানি তেল এখন ৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সরকার বলছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় সরকার বাধ্য হয়ে তা বাড়িয়েছে। এছাড়া ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি। এতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশের বাজারেও সমন্বয় করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে সরকার।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মঘট শুরু করে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। মালিক ও শ্রমিক উভয় পক্ষ এই ধর্মঘটে সায় দিয়েছে। এছাড়া ভাড়া শতভাগ বাড়ানোর দাবিতে শনিবার দুপুর থেকে লঞ্চ চলাচলও বন্ধ রেখেছে মালিকপক্ষ। এতে সারাদেশে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রীসাধারণ।

ছবি: রওনক মাহমুদ

অর্থসূচক/আরএমএস/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.