প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ

অর্থনীতির সবচেয়ে ইতিবাচক সূচকটিও এখন কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক মাস ধরেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমছে। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ১৬৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। গত বছরের অক্টোবরে পাঠিয়েছিলেন ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার।

আজ সোমবার (০১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ অক্টোবর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১৬৪ কোটি ৬৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা ধরে) যার পরিমাণ ১৪ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। যা গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর মে মাসে তা কিছুটা বেড়ে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার হয়। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স আসে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার।

এদিকে গত চার মাস ধরে ধারাবাহিকভাবেই কমছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। অক্টোবর মাসে সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭২ কোটি মার্কিন ডলার। আগস্ট মাসে এসেছিল ১৮১ কোটি ডলার। যা তার আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে ৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ বা প্রায় ৮ শতাংশ কম। এর আগে চলতি বছরের জুলাইয়ে দেশে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আসে। যা তার আগের মাস জুনের চেয়ে ৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলার কম। এছাড়া আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ৭০৫ কোটি ৫০ লাখ (৭.০৫ বিলিয়ন) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৮৮১ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এই হিসাবে চার মাসে রেমিট্যান্স কমেছে ২০ শতাংশ।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত করোনাকালীন হুন্ডির প্রবণতা কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ফলে ওই সময় রেমিট্যান্স বেড়েছিল। এছাড়া, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির সময়ে প্রবাসীরা বিভিন্ন অনিশ্চয়তার কারণে নিজেদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করেও দেশে টাকা পাঠিয়েছেন। ফলে সে সময় রেমিট্যান্স বেড়েছে। এখন করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। অনেক দেশের ভ্রমণ-যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্য সচল হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অর্থের চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় কমছে। তাদের মতে, করোনার সময়ে অনিক প্রবাসী দেশে ফিরে এসেছেন। নানা জটিলতার কারণে তারা এখনো ফেরত যেতে পারছেন না। তাদেরকে অতি দ্রুত সময়ে ফেরত পাঠাতে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয়, নতুন শ্রমশক্তি রফতানিতেও সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, অনেকে দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছেন। আবার অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। এসব কারণে রেমিট্যান্স নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। তবে শ্রম রফতানি শুরু হওয়ায় শিগগিরই আবার প্রবাসী আয় ইতিবাচক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৩২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মধ্যে একটিতে এসেছে ৩ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

বরাবরের মতো বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অক্টোবরে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংকে এসেছে ১৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৮৭ লাখ ডলার এবং ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে

রেমিট্যান্স এসেছে ৮ কোটি ২৬ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে আসে। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। এরআগে কোনো অর্থবছরে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি বাংলাদেশে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। অর্থবছর হিসাবে যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণের রেকর্ড হয়। ওই সময় এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার সঙ্গে আরও ২ টাকা যোগ করে মোট ১০২ টাকা পাচ্ছেন সুবিধাভোগীরা

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.