খুন-ধর্ষণ মামলায় ক্ষমা পাবেন না আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা: আইজিপি

খুন ও ধর্ষণকে খুবই জঘন্য ও গর্হিত অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মধ্যে যারা মার্ডার (খুন) ও ধর্ষণ করেছেন, তাদের বিষয়ে কোনো আইনগত সহযোগিতা করা হবে না।

সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে বাগেরহাটের রামপালে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি ও আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তিদের পুনর্বাসন অনুষ্ঠান-২০২১ উপলক্ষে তিনি এসব কথা বলেন।

র‍্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

আইজিপি বলেন, ২০১৬ সালে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণে সরকার সাড়া দেয় এবং বিনা শর্তে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া তাদের কাছে যে অস্ত্রশস্ত্র ছিল সেগুলোও র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বেআইনি অস্ত্র সংরক্ষণের জন্য আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা জেলে যায়, এরপর তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে সহযোগিতা দেওয়া হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের নেতৃত্বে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, যারা মার্ডার (খুন) ও ধর্ষণ করেছে তাদের বিষয়ে কোনো আইনগত সহযোগিতা সরকার করবে না। কারণ এ দুটি খুবই জঘন্য ও গর্হিত অপরাধ।

যদি কারও আত্মীয়স্বজন খুন হয়, তাহলে সে খুনের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে জানিয়ে পুলিশপ্রধান বলেন, যদি কোনো নারী ধর্ষণের শিকার হন, তবে তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। জলদস্যুদের এ দুটি অপরাধ ছাড়া বাকি সব ধরনের অপরাধের বিষয়ে আমরা নমনীয় হবো।

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন জলদস্যুমুক্ত করতে র‌্যাব একটি সাঁড়াশি অভিযান চালায়। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে একাধিক অভিযান চালানো হয়। তখন শহীদ কর্নেল আজাদ আমাকে বলে, ‘স্যার, এ জলদস্যুরা র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চায়।’ সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিম সুন্দরবন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে জলদস্যুদের যোগাযোগ ছিল। অভিযানে তখন র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে জলদস্যুরা মারা যাচ্ছিল। চাপের মুখে জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হন সাংবাদিক মোহসিনুল হাকিম।

আইজিপি বলেন, এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেন। এরপরই প্রথমবার জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, শুধু আত্মসমর্পণ করলেই হবে না, জলদস্যুদের সমাজে পুনর্বাসনের একটি বিষয় ছিল। আত্মসমর্পণের পরে প্রধানমন্ত্রী জলদস্যুদের মাঝে অর্থ সাহায্য দিয়েছেন। আবার পুনর্বাসন করলেই হবে না, সমাজের মূলধারায় পুনর্বাসনের চ্যালেঞ্জ ছিল। যারা আত্মসমর্পণ করেছে তারা কী কারণে জলদস্যু হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের একটি করে গল্প আছে। সাংবাদিক ভাইয়রা চাইলে সে সব গল্প পাতার পর পাতা লিখতে পারেন।

আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুরা দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করেছেন জানিয়ে আইজিপি বলেন, এতদিন ধরে জলদস্যুতা করলেও তাদের থাকার একটি ঘরও ছিল না। কিছু করে খাওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না। আত্মসমর্পণ করা ৩২৮ জন জলদস্যুর মধ্যে মাত্র একজন ডাকাতের অর্থ-বিত্তের সন্ধান আমরা পেয়েছিলাম। বাকিদের কোনো সামর্থ্য ছিল না। কারণ এ জলদস্যুদের কেন্দ্র করে বিশাল একটি সুবিধাভোগী চক্র গড়ে উঠেছিল।

পুলিশপ্রধান বলেন, আমি যখন র‌্যাব ডিজি ছিলাম, তখন এ অঞ্চলে চারটি র‌্যাবের ক্যাম্প বানানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। কারণ চারটি ক্যাম্প বানানোর মতো জায়গা এখানে পাইনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ও অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা পারিনি। দুবলার চরে র‌্যাবের একটি ক্যাম্প আছে। সেখানে তিনদিন থাকলে শরীরের ওপর দুই ইঞ্চি লবণের প্রলেপ পড়ে। এছাড়া যে পরিমাণ তাপমাত্রা, তাতে সেখানে দায়িত্ব পালন করা খুবই কষ্টসাধ্য। অনেকেই ঢাকায় থেকে ভাবতে পারেন এখানে বিচ হবে, কিন্তু ইটস নট এ বিচ লাইক। সুন্দরবনের মধ্যে তিনদিন থাকলে বোঝা যায়- হাউ ডিফিকাল্ট ইজ দ্য লাইফ। আমি মনে করি এ চারটি ক্যাম্প হওয়া দরকার। এতে সুন্দরবন আরও নিরাপদ হবে।

‘জলদস্যুমুক্ত হওয়ার পরে সুন্দরবনে হরিণ ও বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। এটির বহুমুখী প্রতিফলন তৈরি হয়েছে’- যোগ করেন আইজিপি।

এসময় সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধন না করার জন্য জেলেদের প্রতি অনুরোধ জানান আইজিপি।

ড. বেনজীর বলেন, এ অঞ্চলে জলদস্যুদের যে অত্যাচার ছিল তা মানুষ কখনোই ভুলবে না। এখানকার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছে, একসময় মানুষ এগুলো ভুলে যাবে। সে কারণে সুন্দরবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্রায়ন করেছি ‘অপারেশন সুন্দরবন’ নামে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন র‌্যাবের অরিতিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.