সিএসইতে চালু হল সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ভার্চুয়াল প্লাটফরমে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন চালু হয়েছে। আজ রোববার (৩১ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই লেনদেন শুরু হয়েছে। এখন থেকে ঘরে বসেই বিনিয়োগকারীরা ট্রেজারি বন্ডসহ সরকারি নানা সিকিউরিটিজ কিনতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব ড. নাহিদ হোসেন, ফাইন্যান্স বিভাগের যুগ্ম সচিব ফিরোজ আহমেদ,  বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার ছিদ্দিকুর রহমনসহ অর্থমন্ত্রণালয়, বিএসইসি, সিএসই, সিডিবিএল, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির প্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের শেয়ারবাজারে পাইলটিংয়ের আওতায় বিভিন্ন মেয়াদি ৪টি সরকারি সিকিউরিটিজের (ট্রেজারি বন্ড) লেনদেন শুরু হয়েছে। এটি আমাদের শেয়ারবাজারের জন্য মাইলফলক ও দুর্দান্ত বিষয়। কারণ আমাদের প্রচুর সরকারি বন্ড রয়েছে। তবে তা কিছু মানুষের কাছে মজুত রয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ যাতে লেনদেন করতে পারে সে লক্ষ্যে শেয়ারবাজারে সরকারি সিকিউরিটিজ চালু করা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পূর্ণরূপে এই প্রোগ্রামটি শুরু করতে সক্ষম হব বলে আশা করছি। আমাদের এখনও এক সপ্তাহ সময় আছে। আমি সেই অপেক্ষায় আছি। এ কাজের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রয়োজন। আমি নিশ্চিত যে, আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই বিষয়ে কাজ করেছেন। আমি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আপনাদের সকলের একটি চমৎকার প্রস্তুতি কামনা করছি। নিশ্চিত ও চূড়ান্তভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা আপনাদের নিশ্চিত করা হবে।

শামসুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, পুঁজিবাজারে সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন পুরোপুরিভাবে চালু করার আগে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। সকল স্টেকহোল্ডাররা যাতে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে পোরেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে সিএসই চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে “মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, উন্নয়ন-অর্থায়নের উৎস হবে পুঁজিবাজার” এই স্লোগানকে সামনে রেখে, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাদের প্রয়োজন অত্যন্ত দক্ষ, বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী পুঁজিবাজার।

আসিফ ইব্রাহিম আরও বলেন, ট্রেজারি বন্ড লেনদেন আমাদের বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট আয়ের উপকরণের মাধ্যমে তাদের পোর্টফোলিও ঝুঁকি মুক্ত করার সুযোগ দেবে। এ বন্ডের জন্য একটি শক্তিশালী সেকেন্ডারি মার্কেট দীর্ঘমেয়াদে সরকারের ঋণের খরচ কমিয়ে দেবে।

তিনি বলেন, গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ১৬ বছর পর সরকারি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন পুনরায় শুরু হয়েছে। ডিএসই’র ট্রেডিং সিস্টেম ব্যবহার করে ট্রেজারি বন্ডের প্রথম ট্রেডিং নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। সিএসইতে লার্জ স্কেল পাইলটিংয়ের আওতায় বিভিন্ন মেয়াদি ৪টি সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হয়েছে। এটি আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য একটি অসাধারণ মাইলফলক। বিনিয়োগকারীরা এই নতুন স্থির আয়ের পণ্যটির ট্রেডিং শুরু হওয়ার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করেছে। এটি সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত হওয়া উচিত।

প্রথম দিন ৪টি লেনদেন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব লেনদেনের সাথে যুক্ত ব্রোকারহাউজগুলো হচ্ছে-সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড, লংকাবাংলা সিকিউরিটিজ, ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজ, মোনা ফাইনেন্সিয়াল সার্ভিসেস, স্কয়ার সিকিউরিটিজ, এমটিবি ক্যাপিটাল।

লেনদেন শেষে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার সাফ্ফাত রেজা বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। এর মধ্য দিয়ে বাজারে বৈচিত্র বাড়বে।

সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফফান ইউসুফ বলেন, ট্রেজারি বন্ডের লেনদেনের ফলে বাজারের প্রতি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে। বাজারে নতুন তারল্য আসবে। এটি বাজারকে সমৃদ্ধ করবে।

ঢাকা ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাফিজ আল তারিক বলেন, ট্রেজারি বন্ড চালুর বিষয়টি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক একটি ঘটনা। তবে এর লেনদেনকে উৎসাহিত করতে ব্রোকারেজ কমিশনের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। কারণ বেশি কমিশন নেওয়া হলে ক্রেতারা আ্রহী হবে না। আবার কোনো কমিশন না থাকলে ব্রোকারহাউজগুলো উৎসাহ হারাবে।

 

অর্থসূচক/এমআর/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.