‘মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার আরো ১০ গুণ বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার রয়েছে। যা আরো ১০ গুণ বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা এ খাতটি অনেক দূর এগিয়ে নিতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা সেবক হিসেবে যত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার, তার সব দিতে চাই।

বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে আজ শনিবার (০৯ অক্টোবর) অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড (এএএমসিএমএফ) আয়োজিত ‘ইনস্টিটিউশনাল রোল ইন সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডের সভাপতি ড. হাসান ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন, ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, আমাদের মিউচুয়াল ফান্ড খাতের কোনো প্রচার নেই। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে দুজন মানুষ ফোন করে কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবে তা জানতে চান। যেখানে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব শ্রেণির মানুষ ফোন করেন। এছাড়া কেমন রিটার্ন দেয়, তাও জানতে চান তারা।

‘কেননা বর্তমানে ব্যাংকে আমানতের সুদহার মূল্যস্ফীতির হারের নিচে নেমে গেছে। সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগেও নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ফলে মানুষ বিনিয়োগের জন্য অন্যান্য বিকল্প খুঁজছে।’

তিনি বলেন, এ বছর ফান্ডগুলো অনেক ভালো রিটার্ন দিয়েছে। এ খাতটি উন্নত করার যে সঠিক সময় পার করছে, সেই সুযোগটি আমরাও কাজে লাগাতে চাই। ফান্ডগুলোর যদি প্রচারণায় অনেক খরচ মনে করেন, তাহলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে করেন। আমি তো যখনই আইপিএলের খেলা দেখতে বসি, তখনই ভারতের মিউচুয়াল ফান্ডের বিজ্ঞাপন দেখি। তার মানে ওরা ফান্ড জনপ্রিয় করেছে। ওদের ফান্ডের আকার অনেক বড়। আমাদের ফান্ডগুলোও এখনই বড় করতে প্রচারণায় নামতে হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ড. মিজানের (বিএসইসির কমিশনার) ভাষ্য অনুযায়ী, আমাদের মিউচুয়াল ফান্ডের আকার মাত্র ১৫ হাজার কোটি টাকা। এত ছোট কেন হবে? সবাইকে এই ১৫ হাজার কোটির আকারকে কীভাবে দেড় লাখে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আপনারা আমাদের বলেন, কী করতে হবে, কোথায় সমস্যা। আমরা আপনাদের আইনগতভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করবো। কেন আপনারা বলছেন না, ফান্ডের আকার বাড়ানো দরকার। কোথায় বাধা আছে, তা জানান।

তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও মিউচুয়াল ফান্ড খাত নিয়ে কমিশন সভায় বসেছিল। কীভাবে এ খাতকে সহযোগিতা ও দশগুণ আকার করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়। তাই আপনারে কাছে আশা করবো এ খাতে কী সহযোগিতা রকার তা আমারে বলবেন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, একতাই বল। অতএব সবাইকে এক থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কাজ করতে গেলে এমন হয়। তবে কথা বলে তা সমাধান করে নিতে হবে। আমাদের এক থাকতে হবে। এর মাধ্যমে এই খাতকে বড় বিনিয়োগ আকারে নিয়ে আসতে চাই। তখনই আপনাদের আজকের আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আপনারা সঠিক দিক নির্দেশনার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডের ভূমিকা। এই বাজারের স্ট্যাবলে মিউচুয়াল ফান্ডের মতো দক্ষ ও শিক্ষিত জনবল আর কোথাও পাওয়া যায় না। এ কারণে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের দায়িত্বরতদের প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি। আপনাদের বুদ্ধিমত্তা ও বিবেচনাকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ে যে ভয়, শঙ্কা ও বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়, সে জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে সাপোর্ট দেওয়া নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, এখন পুঁজিবাজার থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হয়, তা ১০০ গুণ বেড়ে যাবে। এজন্য মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে সহযোগিতা করা দরকার। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, অর্থনীতি কিন্তু সবার। আমরা পুঁজিবাজারে প্রতিদিন যে দুই-তিন হাজার কোটি টাকার লেনদেন করি সব টাকা কিন্তু ব্যাংকে চলে যায়। সুতরাং পুঁজিবাজার যত বড়ই হোক না কেন, টাকা-পয়সা সব আপনাদের (ব্যাংক) কাছে থাকে। আপনাদের মাধ্যমেই টাকা-পয়সা লেনদেন হয়। সুতরাং পুঁজিবাজার বড় হয়ে গেলে মানি মার্কেটের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, এটা যেন কেউ কখনো মনে না করেন। বরং পুঁজিবাজার যত বড় হবে, ফিস-সহ নানাভাবে ব্যাংকের তত আয় বাড়বে।

অর্থসূচক/এমএস/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.