বিশ্ব নেতাদের গোপন সম্পদের তথ্য ফাঁস

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতা, রাজনীতিক এবং ধনকুবেরদের গোপন সম্পদ এবং লেনদেনের বিপুল নথি ফাঁস হয়েছে। অন্তত ৩৫ জন সাবেক ও বর্তমান নেতা এবং তিনশ’ সরকারি কর্মকর্তার নথি ফাঁস করে দিয়েছে প্যান্ডোরা পেপার্স। এসব নথিপত্রে অন্যান্যের মধ্যে রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন, জর্ডানের বাদশাহ এবং সাবেক ব্রিটিশ নেতা টনি ব্লেয়ারের গোপন সম্পদ ও লেনদেনের তথ্য রয়েছে।

গত সাত বছর ধরে ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স এবং লাক্সলিকসের প্রতিবেদনে অনেকের গোপন সম্পদের অনেকটাই ফাঁস করে। এরই ধারাবাহিকতায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস’ (আইসিআইজে) এর মাধ্যমে সামনে এসেছে প্যান্ডোরা পেপার্স।

আইসিআইজে’র প্রায় সাড়ে ছয় শতাধিক সাংবাদিক এই অনুসন্ধানে অংশ নেয়। বিবিসি প্যানোরমা, গার্ডিয়ানসহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ নথি ও ফাইলপত্র হাতে পেয়েছে। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, বেলিজে, সাইপ্রাস, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ১৪টি আর্থিক সেবা কোম্পানির নথি রয়েছে এতে।

প্যান্ডোরা পেপার্স নামে এসব দলিলপত্রে প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা এবং তিন শতাধিক সরকারি কর্মকর্তার নাম রয়েছে-যারা বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্ট। তাদের মধ্যে রয়েছেন-জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই বাবিস, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার প্রমুখ।

ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান ও বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া দ্বীপপুঞ্জের মতো দেশ ও অঞ্চলের কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে অর্থ রেখেছেন ও গোপন লেনদেন করেছেন, সেই তথ্য ফাঁস হয়েছে। গার্ডিয়ান ও বিবিসিসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ওই সব কোম্পানির হাজার হাজার নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে প্যান্ডোরা পেপারস।

বিবিসি বলছে, অফশোর কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারী হিসেবে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ জন নেতা এবং ৩০০-এর বেশি সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। ৯০টির বেশি দেশের এসব কর্মকর্তার মধ্যে মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র ও সেনাবাহিনীর জেনারেলরা রয়েছেন। আরও আছেন শতাধিক বিলিওনিয়ার, বিভিন্ন ক্ষেত্রের জনপ্রিয় ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা।

এতে দেখা গেছে, জর্ডানের বাদশাহ গোপনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে ১০ কোটি ডলারের সম্পদ করেছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তার স্ত্রী লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ড কর ফাঁকি দিয়েছেন।

ফাঁস হওয়া নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মোনাকোয় গোপন সম্পদ এবং চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিসের ফ্রান্সে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়ে প্রাসাদ কেনার তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তার পরিবার তাদের একজন। এই পরিবারের বিরুদ্ধে নিজ দেশের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

বিবিসি বলছে, তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে, তা হলো খ্যাতিমান ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা কীভাবে যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ কিনতে আইনি পথেই বিভিন্ন কোম্পানি গঠন করেছেন। এসব কেনাকাটার পেছনে থাকা প্রায় ৯৫ হাজার অফশোর কোম্পানির মালিকদের নাম এসেছে।

গত সাত বছরে প্যারাডাইস পেপার্স, পানামা পেপার্স ইত্যাদি নামে যেসব গোপন দলিলপত্র ফাঁস হয়েছে-এই প্যান্ডোরা পেপার্স হচ্ছে তার সর্বশেষ ঘটনা।

 

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.