‘কৃষিবিদ ফিডের উৎপাদনক্ষমতা দেড়গুণ বাড়ানো হবে’

কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে আসছে কৃষিবিদ ফিড লিমিটেড। কোম্পানিটি তার ব্যবসা সম্প্রসারণে পুঁজিবাজার থেকে ২২ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। অর্থসূচককে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কোম্পানির নানা দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন এর কৃষিবিদ ফিডের চেয়ারম্যান ড. আলী আফজাল। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন মাসুম রহমান

আপনাদের গ্রুপ সাধারণ পাঠকের কাছে তেমন পরিচিত নয়। শুরুতেই যদি এই গ্রুপ সম্পর্কে কিছু বলতেন।

কৃষিবিদ গ্রুপ দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। আমরা ৫ জন কৃষিবিদ মিলে ২০০১ সালে এই গ্রুপের কার্যক্রম শুরু করি। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ একটি কৃষি-প্রধান দেশ। আমাদের দেশের উন্নতি, অগ্রগতি অনেকাংশেই কৃষির উপর নির্ভরশীল। আমরা এটা বিশ্বাস করি, আমরা কৃষি বিজ্ঞানীরা এদেশের আলোবাতাসে বড় হয়েছি, এদেশের পরিবেশের সাথে মিলেমিশে বেড়ে উঠেছি, তাই এদেশের জন্য, এদেশের কৃষকের জন্য, কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য আমাদের অনেক কিছু করার আছে। দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সেই ভাবনা থেকেই আমাদের কৃষিবিদ গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়।

কৃষিবিদ ফিড কি ধরনের পণ্য উৎপাদন করে থাকে? আপনাদের পণ্যের বাজারের আকার কেমন?

কৃষিবিদ ফিড মূলত পোল্ট্রি ফিড, ফিশ ফিড ও ক্যাটেল ফিড- এই তিন ধরনের খাবার উৎপাদন করে থাকে। মুরগী, মাছ ও গবাদি পশুর চাহিদা এবং ধরনের উপর নির্ভর করে আমরা প্রায় ৬৬ ধরণের ফিড উৎপাদন করে থাকি।

এই ফিডের বাজারের আকার কত বড়? এখানে আপনাদের অংশ কতটুকু?

পুরো বাজারের আকার যদি ধরেন, তবে বলবো কৃষিজাত খাদ্যের বাজার অনেক বড়। তবে এ বাজারে আমাদের অবস্থান অতো বড় নয়। বড় বড় নামকরা কোম্পানিগুলো যদি এই বাজারের প্রথম সারির হয় তবে তার পরের সারিতেই আমাদের অবস্থান। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলবো যদি কোয়ালিটি চেক করা হয় বাংলাদেশে, যে কোনো কোম্পানি থেকে আমাদের পণ্যের মান ভাল। কোয়ালিটিতে আমরা নাম্বার ওয়ান।

সম্ভাবনাময় বাজারে নিজেদের অংশ বাড়াতে কি প্রস্তুতি আছে আপনাদের?

আমরা একটু ধীরে চলায় বিশ্বাসী। ধীরে ধীরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে চাই। যেহেতু এটি কৃষি বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান, তাই রাতারাতি অনেক কিছু করে ফেলবো এই নীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। আপনারা দেখেছেন যে, পূর্বে অনেক কোম্পানি-ই রাতারাতি উঠে এসেছিলো, কিন্তু বাজারে বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। এই ফিড মার্কেটের আকার অনেক বড়। প্রতি মাসে প্রায় কয়েক লাখ মেট্রিক টন চাহিদা থাকে। এখন আমাদের একটি মাত্র ফ্যাক্টরি। আমরা এই বাজারে আমাদের অংশ বাড়াতে আরো কয়েকটি ফ্যাক্টরি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছি।

বর্তমানে আমাদের ফিড উৎপাদনের ক্ষমতা প্রতিমাসে ৬ হাজার মেট্রিক টন, যা আগামী অর্থবছরের মধ্যে ১০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এর বছর এই ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে মাসে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত করতে পারবো বলে আশা করি।

কৃষিবিদ ফিডের চেয়ারম্যান ড. আলী আফজাল

অর্থনীতিতে এই খাতের গুরুত্ব কতোটুকু?

আমাদের কোম্পানিটি মূলত কৃষিখাতভিত্তিক। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষির উন্নতি অগ্রগতির উপরেই এদেশের উন্নতি নির্ভরশীল। আমরা যদি শিল্পবিপ্লবের কথাও বলি, তাহলেও কৃষি খাতের অগ্রগতি ছাড়া সেটা কখনই সম্ভব নয়। শিল্পবিপ্লব করতে হলে অবশ্যই আগে কৃষিবিপ্লব করতে হবে। কারণ প্রায় সকল শিল্পেরই কাঁচামালের যোগান আসে কৃষিজাত পণ্য থেকেই। তাই দেশের অর্থনীতিতে এই খাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কোনো সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন কি?

আন্তর্জাতিকভাবে ইস অফ ডুয়িং বিজনেস সূচকে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে, এটা আমাদের জন্য একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যা  সমাধানের জন্য সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারপরও কিছু অসাধু ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কারণে দেখা যায় ব্যবসায়িরা প্রয়োজনের সময়ে সঠিক সহায়তা পায় না বা পেলেও অনেক বেগ পেতে হয়। আর আপনারা জানেন যে, অতিমারী চলাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের দেশের ইন্ডাস্ট্রিগুলো। আর ফিড ইন্ডাস্ট্রির কাঁচামালের বড় একটা অংশই আমাদের আমদানি করতে হয়, কিন্তু আমদানি বাধাগ্রস্ত হবার কারণে কাঁচামালের মূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। কিন্তু এর উপর ভিত্তি করে আমরাও যদি ফিডের দাম বাড়িয়ে দিগুণ করে দেই তবে কি চাষী বাচবে? এই জায়গাগুলোতে আমরা অনেকটাই বেকায়দায় আছি।

কিউআইও থেকে উত্তোলিত অর্থ কোম্পানির ব্যবসার উন্নয়নে কীভাবে কাজে লাগবে?

কিউআইও থেকে যে ২২ কোটি টাকা আমরা পাবো, তা মূলত কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য কাজে লাগানো হবে। পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলন করা অর্থের একটি অংশ দিয়ে এই বছরেই আমরা কৃষিবিদ ফিডের দুইটি নতুন কারখানা স্থাপন করবো। বর্তমানে আমাদের শুধু একটি কারখানা আছে। আমরা মাগুরাতে প্রায় ১০ একর জমি কিনেছি। দিনাজপুরে কেনা হয়েছে ৮ একর জায়গা। আমরা এই দুই জেলায় ২টি কারখানা স্থাপন করবো। এতে আরও সহজে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের খামারিদের কাছে আমাদের পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো। এতে আমাদের পণ্য পরিবহন খরচ অনেকটা সাশ্রয় হবে, আ কোম্পানির মুনাফা বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখবে। এছাড়া আমাদের বিদ্যমান কারখানাগুলোতেও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।

কিউআইওকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

আমি নিজে পুঁজিবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট নই। তবু দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, একজন কৃষি বিজ্ঞানী হিসেবে আমার পরামর্শ, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেন সবাই সচেতন থাকেন, জেনেবুঝে বিনিয়োগ করেন। হুজগে পড়ে বা গুজবে কান দিয়ে যেন বিনিয়োগ না করেন। কোনো শেয়ার কেনার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির খোঁজখবর নিয়ে, অতীত রেকর্ড ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

আর আমাদের কোম্পানি সম্পর্কে বলবো, কৃষিবিদ ফিড একটি স্ট্যাবল কোম্পানি। খুবই শক্তিশালী একটি ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে এটি। আমাদের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা আছে। তাই আমাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে সবাই লাভবান হবেন বলে আশা করছি ।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.