বুড়িগঙ্গা দূষণ ও প্রতিকার চেয়ে নাগরিক সভা

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এর দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পের আয়োজনে বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় ‘বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ ও প্রতিকার’ শিরোনামে এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে কামরাঙ্গীরচরের শেখ জামাল হাই স্কুল এর পশ্চিম পাশে ভেড়িবাধ সংলগ্ন এলাকায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক এবং ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ এর নির্বাহী পরিচালক শরীফ জামিলের সভাপতিত্বে উক্ত নাগরিক সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নূরে আলম চৌধুরী, কাউন্সিলর, ৫৫ নং ওয়ার্ড, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

সভায় আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, এবং পরিচালক, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ; মোহাম্মদ এজাজ, চেয়ারম্যান, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার; আমির হাসান মাসুদ, সভাপতি, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ; জিএম রুস্তম খান, সভাপতি, সচেতন নগরবাসী; এসএম জাহাঙ্গীর আদেল, সভাপতি, সচেতন নাগরিক সমাজ সংগঠন; উম্মে সালমা, মহাসচিব, নিরাপদ চিকিৎসা চাই; ইশরাত জাহান লতা, বনলতা নারী উন্নয়ন সংস্থা প্রমূখ।

সভাটি সঞ্চালনা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর কর্মকর্তা এমএম কবীর মামুন।

দূষণবিরোধী শক্তিশালী নাগরিক প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইউএসএআইডি, এফসিডিও এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম এর মাধ্যমে নদী দূষণ রোধে পরিচালিত এই নাগরিক সভায় ঢাকা শহরের প্রধান নদী বুড়িগঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে প্রাণ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নাগরিক সমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ আলোচনায় অংশ নিয়ে এই আলোচনাকে প্রাণবন্ত করে তোলেন।

সভাপতির বক্তব্যে শরীফ জামিল বলেন, ২০১৩ সালের পানি আইন অনুযায়ী নদীর প্রবাহ চলবে তার নিজ গতিতে। নদী পাড়ের মানুষকে বুঝাতে হবে যে, নদীর মালিকানা নদী পাড়ের মানুষেরই। নদী পাড়ের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে নদী রক্ষায়। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর ষাট ভাগ দূষণ হয় শিল্প বর্জ্যরে দ্বারা, ত্রিশ ভাগ দূষণ হয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে আর দশভাগ দূষণ সম্পন্ন হয় গৃহস্থালীর বর্জ্যরে দ্বারা। এই দূষণ প্রতিকারে মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি পরিবর্তন আনতে হবে নীতি ও আইনী কাঠামোতে।

৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরে আলম চৌধুরী বলেন, একসময় আমরা এই বুড়িগঙ্গার নদী পান করতাম। আজকে এই পানির পঁচা গন্ধে নদীর পাড়ে যাওয়া যায় না। আমরা জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করছি। আপনারা সংগঠন হিসাবে এগিয়ে এসেছেন, জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। সকলকে নিয়ে একসাথে যদি বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এমন সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় তাহলে আমরা বুড়িগঙ্গাকে রক্ষা করতে পারবো।

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, ক্ষমতাবান মানুষেরাই নদী দখল ও দূষণ করে। নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে আমাদেরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। নদী পাড়ের মানুষ এবং সরকারের যৌথ চেষ্টায় বাংলাদেশ একদিন পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে।

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, বুড়িগঙ্গার পানি দূষণমুক্ত হলে এই পানি ওয়াসার মাধ্যমে আমরাও ব্যবহার করতে পারবো। ঢাকাবাসীর ঘরে ঘরে আরো কম খরচে মানুষ ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে পারবে, পানির জন্য পদ্মা কিংবা মেঘনায় যেতে হবে না।

সভায় স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ বলেন, দূষিত হতে হতে ঢাকার মূল নদী বুড়িগঙ্গা এখন মৃতপ্রায় অবস্থা। এই এই নদীকে যদি রক্ষা করা না যায়, নদীকে যদি ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব হবে না। তাই আমরা যেমন এগিয়ে এসেছি, সরকারকেও এগিয়ে আসতে হবে বুড়িগঙ্গাসহ দেশের সকল নদীকে দুষণ ও দখলের হাত থেকে বাঁচাতে।

অর্থসূচক/এমএস

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.