রুটদের হতাশায় ডুবিয়ে এগিয়ে গেল ভারত

চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ভারতের বোলারদের ওপর দাপট দেখিয়ে ররি বার্নস ও হাসিব হামিদ যে উত্তাপের আভাস দিয়েছিলেন তা ভেস্তে গেছে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। পঞ্চম দিন জসপ্রিত বুমরাহ-শার্দুল ঠাকুরদের সামলানোর যে চালেঞ্জ ছিল সেখানে সামিল হতে পারেনি জো রুটের দল।

বরং রবীন্দ্র জাদেজা-জসপ্রিত বুমরাহ-উমেশ যাদব ও শার্দুল ঠাকুরদের বোলিং তোপে অসহায় আত্মসমর্পণ করে ইংল্যান্ড। ৩৬৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে স্বাগতিকরা মাত্র ২১০ রানে গুটিয়ে গেলে সহজ তুলে নেয় ভারত। দ্য ওভালে ইংল্যান্ডকে ১৫৭ রানে হারিয়ে সিরিজে আরও একবার এগিয়ে বিরাট কোহলির দল।

চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে হামিদ-বার্নসের ৭৭ রানের দারুণ এক জুটিতে শক্ত ভিত পাওয়া ইংল্যান্ডের ম্যাচ জিততে শেষ দিনে প্রয়োজন ছিল ২৯১ রান। পঞ্চম দিন ভারতের বোলারদের সামলানোর যে চ্যালেঞ্জ ছিল সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। আগের দিন ২ চারে ৩১ রানে অপরাজিত থাকা ররি বার্নস এদিন সকালেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন।

শার্দুলের বলে ডিপ পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে দুই রান নেন বার্নস। তাতেই ১২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তবে হাফ সেঞ্চুরির করার পরের বলেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে বল যখন ভেতরের দিকে ধেয়ে আসার সময় বার্নস ব্যাট এগিয়ে দিলে তা আলতো করে স্পর্শ করে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে চলে যায়। সেই ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করেননি উইকেটরক্ষক ঋষভ পান্ত। ৫ চারে ৫০ রান করে ফিরলেও হামিদের সঙ্গে তাঁর শতরানের রেকর্ডও বটে।

২০১৬ সালের পর চতুর্থ ইনিংসে প্রথমবারের ১০০ রানের জুটি গড়েছে ইংল্যান্ডের ওপেনাররা। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে শতরানের জুটি গড়েছিলেন অ্যালেস্টার কুক ও বেন ডাকেট। চতুর্থ দিন শেষে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকা হামিদ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ১২৩ বলে। রবীন্দ্র জাদেজার ফুলটস বলে ডিপ মিড উইকেট ঠেলে দিয়ে তিন রান নিয়ে ক্যারিয়ারের ৪র্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডানহাতি এই ওপেনার।

বার্নসের বিদায়ের পর তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি ডেভিড মালান। সকালের শুরুতে ভারতের বোলারদের সামলাতে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছে তাঁকে। থিতু হওয়ার চেষ্টা করলেও প্রথম সেশনের শেষ দিকে এসে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। জাদেজার বলে কভারে ঠেলে দিয়ে রান নেয়ার চেষ্টা করেন হামিদ। ডানহাতি এই ওপেনারের ডাকে সাড়া দেন মালানও। ঝুঁকিপূর্ণ এক রান নিতে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় মালানকে।

বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ড্রাইভ দিলেও পপিং ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই উইকেটের বেল উপড়ে ফেলেন পান্ত। তাতে হেডিংলিতে দারুণ এক ইনিংস খেললেও দ্য ওভালে ব্যর্থ মালান। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান এদিন ফিরেছেন মাত্র ৫ রান। মালান অবশ্য এর আগেও ফিরতে পারবেন তবে আম্পায়ার্স কলের কারণে সেই যাত্রায় লেগ বিফোরের থেকে বেঁচে গেছেন। এরপর প্রথম সেশনের বাকি সময় রুটকে নিয়ে পাড়ি দেন হামিদ। তবে মধ্যাহৃ বিরতি থেকে ফিরতেই ধস নামে ইংল্যান্ড শিবিরে।

হামিদকে দিয়ে যার শুরুটা করেছিলেন জাদেজা। বাঁহাতি এই স্পিনারের বল লেগ স্টাম্প লাইনে পড়ে উইকেটে আঘাত করলে সাজঘরে ফিরতে হয় ৬৩ রান করা হামিদকে। এরপর ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপ দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দেন বুমরাহ। ৬ ওভারের দারুণ এক স্পেলে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন তিনি। যেখানে তিনি সাজঘরে ফিরিয়েছেন ২ রান করা ওলি পোপ ও ডাক মারা জনি বেয়ারস্টোকে।

পোপকে ফিরিয়ে টেস্টে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শে করেন বুমরাহ। ২৪ টেস্টে ১০০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন ডানহাতি এই পেসার। যা ভারতের বোলারদের মাঝে সবচেয়ে কম ম্যাচে ১০০ উইকেটের মাইলফলক। মঈন আলিও এদিন সাজঘরে ফিরেছেন ব্যর্থতার পাল্লা ভারি করে। এরপর ইংল্যান্ডের আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রুটকে ফেরান শার্দুল। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল থার্ডম্যান দিয়ে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে বোল্ড হন রুট। তাতে ওভালে জয়ের স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয় ইংল্যান্ডের।

শেষের দিকে ক্রেইগ ওভারটন-ক্রিস ওকস ও অলি রবিনসনরা ব্যাট হাতে দাঁড়াতে না পারায় ২১০ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। দা ওভালে স্বাগতিকদের ১৫৭ রানে হারিয়ে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সফরকারী ভারত। আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ম্যানচেস্টারে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে মাঠে নামবে এই দুই দল।

অর্থসূচক/এএইচআর

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.