জাপানি নারীর দুই মেয়েকে উদ্ধার

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শরীফ ইমরান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই মেয়ে সন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেছিলেন জাপানের নাগরিক নাকানো এরিকো। হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট দুই শিশুকে হাজির করতে তাদের বাবা শরীফ ইমরানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এর আগেই দুই শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আজ রোববার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যায় সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিসানুল হক জিসান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

জাপানি নাগরিকের দুই শিশু সন্তান জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাদের বাবাকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

পেশায় চিকিৎসক নাকানো এরিকো ঢাকা এসে ১৯ আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। মেয়ে দুটির বাবা বাংলাদেশি শরীফ ইমরানের কাছ থেকে সন্তানদের নিজের জিম্মায় পাওয়ার আবেদন করেন তিনি। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দুই শিশুকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।

গুলশান ও আদাবর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শিশুদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিশুদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তাদের বাবা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। এরপর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছে- জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) ও সানিয়া হেনা (৭)। এরা তিনজনই টোকিও চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।

চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। গত ২১ জানুয়ারি ইমরান টোকিওর ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার এক মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। তবে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের আবেদন নাকচ করে।

আইনজীবীর তথ্যমতে, পরবর্তী সময়ে স্কুলবাসে করে বাসায় ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে (১১ ও ১০) অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। গত ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরিকো ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার জন্য আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। তবে এই আদেশ ভঙ্গ করে ইমরান শুধু একবার মায়ের সঙ্গে বড় দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।

এরিকোর আইনজীবীর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি।

গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে বড় দুই মেয়ের জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। এরপর করোনা পরিস্থিতির কারণে এরিকো এত দিন বাংলাদেশ আসতে পারেননি বলে জানান তার আইনজীবী। তিনি বলেন, ছোট মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এরিকো। তবে ইমরান শ্রীলঙ্কা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন।

এরিকো বাংলাদেশে এসে করোনা পরীক্ষা করান। ফলাফল নেগেটিভ আসে। তবে ইমরান এ ফলাফল অবিশ্বাস করে এরিকোর সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাৎ করানোয় অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই মুঠোফোন সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় এরিকোকে তার মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। একই অবস্থায় গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর দুই মেয়েকে নিজ জিম্মায় চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন নাকানো এরিকো।

অর্থসূচক/কেএসআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.